স্টাফ রিপোর্টার:জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সম্প্রতি বলেন, ‘জুলাই সনদের নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট বা ভিন্নমত দিয়েছে, যা অন্য যেকোনো সংস্কারের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়গুলো নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনাকে স্পষ্ট করতে হবে। বিশেষ করে, যদি সনদটি গণভোটে পাশ হয়, তবে কি এই গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো বাস্তবায়িত হবে কিনা, তা নিশ্চিত করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। এই নিশ্চয়তা দিলে আমাদের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর দিতে কোনো আপত্তি থাকবে না।’
সারজিস আলম আরও উল্লেখ করেন, ‘জুলাই সনদ ঘোষণার দিন প্রশাসনের হাতে শহীদ পরিবারের সদস্য ও জুলাই যোদ্ধাদের পেটানো, আঘাত করা এবং রক্তাক্ত করার ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এক অপমানজনক কাজ। এই ধরনের ঘটনা শুধু কয়েকটি স্বাক্ষর আদায়ের জন্য সংঘটিত হয়েছে, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনার দায়ভার অন্তর্বর্তী সরকার ও আয়োজকদের এড়ানো উচিত নয়।’
এই মন্তব্য তিনি রোববার দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমিতে এনসিপির জেলা শাখার সমন্বয় সভার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রদান করেন।
শাপলা প্রতীক বিতর্ক: নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও আইনি বিশ্লেষণ
সারজিস আলম শাপলা প্রতীকের ব্যাপারে বলেন, ‘কোন আইনের ভিত্তিতে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া যাবে না, তা আমাদের দেখানো হোক। আমরা আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং তারা জানিয়েছেন শাপলা প্রতীক প্রদানে কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলকে তাদের প্রাপ্য মার্কা প্রদানে সাহস প্রকাশ করতে পারছে না। এই কারণে আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া কঠিন।’
রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের অভাব ও জুলাই সনদ স্বাক্ষর প্রক্রিয়া
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পূর্বে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্যমত্য থাকা উচিত ছিল, যা হয়নি। যারা ঐক্যমত্য কমিশনে অংশ নিয়েছিল, আলোচনা তাদের মতামতের ভিত্তিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সব বিষয় সুস্পষ্ট করে চূড়ান্ত না করে অন্তর্বর্তী সরকার তাড়াহুড়া করে সনদে স্বাক্ষর করেছিল।’
জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি অবমাননা অন্তর্বর্তী সরকারের দায় ও রাজনৈতিক প্রভাব
জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি সহিংসতা ও অবজ্ঞার ঘটনাকে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের ডেকে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও দুঃখ প্রকাশ করা, যা করা হয়নি।’
জুলাই সনদ নিয়ে এই বিতর্ক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। একটি প্রামাণ্য ও সম্মিলিত ঐক্যমত্য ছাড়া স্বাক্ষরিত সনদ রাজনৈতিক বিভাজন ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি করতে পারে, যা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
শহীদ ও যোদ্ধাদের প্রতি সহিংসতা ও অবজ্ঞার ঘটনা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা কমিয়ে আনতে পারে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা না গেলে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের বিশ্বাস কমে যেতে পারে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য হুমকি।
এই খবর ও বিশ্লেষণ দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেয়। দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুস্পষ্ট ঐক্যমত্য ও সহমত আনা অপরিহার্য, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব হয়।