দুর্গাপূজার আজ মহানবমী : মণ্ডপে মণ্ডপে বাজবে বিদায়ের সূর

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পুজামণ্ডপ পরিদর্শন

স্টাফ রিপোর্টার: হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার তৃতীয় দিনে গতকাল শনিবার ছিলো মহাষ্টমী। এদিন কুমারীপূজা ছাড়াই দুর্গাপূজার অন্যান্য আয়োজন চলেছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সাজসজ্জা, আলোকসজ্জাসহ উৎসবের অনুষঙ্গগুলোও এড়িয়ে চলা হয়। চতুর্থ দিন আজ রোববার রয়েছে মহানবমী। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা শেষে যথারীতি পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ভোগ আরতি থাকবে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা শুরু হয়। পূজা শেষে অঞ্জলি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১১টা ২৮ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ১৬ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। সর্বত্র পূজা শেষে ভক্ত ও পূজারিরা মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলিতে অংশ নেন। এদিকে গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের বিভিন্ন পুজা মণ্ডব পরিদর্শণ করেছেন প্রশাসন বিভিন্ন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় তিনি পুজা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তারা

পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ রোববার ভোর ৫টা ১৭ মিনিট থেকে সকাল ৭টার মধ্যে দুর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ব ও বিহিত পূজা। অনেকের বিশ্বাস মহানবমীর দিন হচ্ছে, দেবী দুর্গাকে প্রাণ ভরে দেখে নেয়ার দিন। এইদিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেবদেবীকে আহুতি দেয়া হয়। অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। এই দিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন। পরদিন কেবল বিজয়া ও বিসর্জনের পর্ব। নবমী নিশিথে উৎসবের রাত শেষ হয়। নবমী রাত তাই বিদায়ের অমোঘ পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয়। এসব বিবেচনায় অনেকেই মনে করেন নবমীর দিন আধ্যাত্মিকতার চেয়েও অনেক বেশি লোকায়ত ভাবনায় ভাবিত থাকে মন। এ কারণে মণ্ডপে ভিড়ও বাড়ে।

উল্লেখ্য, করোনা মহামারীর কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে এ বছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে পূজাম-প। থাকছে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। স্বাস্থ্যবিধির দিকে খেয়াল রেখে পূজায় প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।

চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার ও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শহরের বড় বাজার, তালতলা, মালোপাড়াসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন তারা। এ সময় জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আমজাদ হোসেন, সদর থানার ওসি আবু জিহাদ ফখরুল আলম খানসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পুজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তারা।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় শারদীয় দূর্গা উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে পৌর এলাকার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন তিনি। পরিদর্শনকালে সার্বিক খোঁজ খবর নেয়ার সাথে সাথে পূজাম-প পরিচালনা কমিটির কাছে নিজস্ব তহবিল থেকে অনুদান প্রদান করেন পৌর মেয়র। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পৌর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, জেলা দোকান মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক মাফিজুর রহমান মাফি, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন জ্যাকি, পৌর ছাত্রলীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, সাবেক দপ্তর সম্পাদক শেখ সামি তাপু, জেলা কৃষকলীগ নেতা ভুলন শেখ, মালোপাড়া শ্রী শ্রী সার্বজনীন দূর্গা উৎসব ও কালী মন্দিরের সভাপতি শ্রী শ্যাম হালদার, বড় বাজার দূর্গা মন্দিরের মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক কিংকর দে, সহসভাপতি শংকর দে, সাধারণ সম্পাদক দীপংকর দে, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক কাজল চক্রবর্তী, সদস্য বাপ্পি কুন্ডু প্রমুখ।

ডিঙ্গেদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা সদরের শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের পূজাম-প পরিদর্শন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার সময় তিনি ফুলবাড়ী পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু ধর্মাম্বলীদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শঙ্করচন্দ্র প্যানেল চেয়ারম্যান শওকত মাহাম্মুদ, সমাজসেবক আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান, আব্দুস সাত্তার মাস্টার প্রমুখ। অপরদিকে সন্ধ্যায় তিনি সরোজগঞ্জ কাছারি পাড়া পূজাম-প পরিদর্শন করেন।

দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলি আজগর টগরের পক্ষে দামুড়হুদা দাসপাড়া পূজা মন্দিরে শাড়ি প্রদান করেছেন দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী। এসময় হযরত আলী তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তিনটি পূজামণ্ডপে নগদ অর্থ প্রদান করেন। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দামুড়হুদার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে শাড়ি ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। এমপির পক্ষে শাড়ি প্রদান শেষে দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দামুড়হুদা দাসপাড়া পূজা মন্দির, দামুড়হুদা সার্বজনীন মাতৃমন্দির ও পুড়াপাড়া আদিবাসি দুর্গামন্দিরে নগদ অর্থ প্রদান করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদার দাসপাড়া পূজাম-পের সভাপতি শ্রী মিলন কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক শ্রী সুভাস কুমার দাস, ক্যাশিয়ার শ্রী উত্তম কুমার দাস, দামুড়হুদা সার্বজনীন মাতৃপূজা ম-পের সভাপতি শ্রী শান্তি কুমার বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শ্রী বাবলু কুমার বিশ্বাস, পুড়াপাড়া আদিবাসি পূজামণ্ডপের সভাপতি শ্রী সূর্য বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শ্রী নির্মল বিশ্বাস। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেন, সুজন আলী, আ. খালেক, ফরহাদ, জুয়েল, রিংকু ও রনি।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, সনাতন ধর্মালম্বীদের ৫ দিনব্যাপী সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের ৩য় দিন মহাঅষ্টমী পালিত হয়েছে। গতকাল শনিবার মহাঅষ্টমীতে সনাতন ধর্মাম্বলীরাসহ অন্য ধর্র্মের মানুষজনও শারদীয় দুর্গোউৎসবে শরিক হন। এদিন মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন পূজাম-পে দর্শার্থীদের ভীড় লক্ষ্য করার মতো ছিলো।

এদিকে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান মেহেরপুরের বিভিন্ন পূজাম-প পরিদর্শন করেছেন। রাতে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান মেহেরপুর শহরের শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, নায়েব বাড়ি মন্দির, শ্রী শ্রী হরিভক্তি প্রদায়িনী পূজা মন্দির, হালদারপাড়া ও মালোপাড়া পূজা মন্দির পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেন এবং শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাড. পল্লব ভট্টাচার্য জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খানকে স্বাগত জানান। মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুল আলম, প্রফেসর হাসানুজ্জামান মালেকসহ জেলা পূজা উদযাপন কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জেলা প্রশাসক মেহেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন।

Comments (0)
Add Comment