৬ চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের আনা হচ্ছে কেরুজ চিনিকলে

কপাল পুড়তে পারে চুক্তি ভিত্তিক ও দিন হাজিরা শ্রমিকের : শ্রমিক নেতাদের কপালে ভাঁজ
দর্শনা অফিস: ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান কেরুজ চিনিকল। চিনিকলটি প্রতিষ্ঠার পর এলাকার অনেক মানুষ কর্মস্থানের সুযোগ পায়। দীর্ঘ ৮৩ বছর ধরে এলাকার অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে কেরুজ চিনিকলের স্মরনীয় ভূমিকা রয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয়দের বেকারত্ব ঘুচিয়েছে অনেকটাই। কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রতি বছর সরকারের খাতায় কোটি কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েও মুনাফা অর্জন করে আসছে শ’ শ’ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হতো, ফলে কর্মসংস্থান পেতো বহু বেকার যুবক। নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হতো এ অঞ্চলের বাসিন্দাদেরই। ২০০০ সাল থেকে এ চিনিকলে অজ্ঞাত কারণে স্থায়ী নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়। অসংখ্য শ্রমিক-কর্মচারীর হয়েছে অবসর । ফলে ২০০১ সালে আপোতকালীন সেটাপ বাতিল করে শ্রমিক-স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের গঠিত নিয়োজন কমিটির মাধ্যমে শতাধিক লোকবল নিয়োজিত কানামনা (কাজ নাই মজুরি নাই) পদে নেয়া হয়। সেই শতাধীক শ্রমিক এখন দক্ষতা অর্জন করেছে। ফলে মিলের যেকোন ত্রুটি সহজেই সারিয়ে তুলতে তারা পারদর্শী। স্বল্প দিন হাজিরায় কাজ করেও স্থায়ী নিয়োগের আশায় বুক বেঁধে থাকলেও সে গুড়ে যেন বালি ঢেলে দিচ্ছে করপোরেশন। সম্প্রতি পাবনা, কুষ্টিয়া জগতি, সেতাপগঞ্জ, পঞ্চগড়, শ্যামপুর ও রংপুর চিনিকল বন্ধ করা হয়। বন্ধ করে দেয়া চিনিকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে কেরুজ চিনিকলে ১৬০ জন শ্রমিককে যোগদান করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যেই ৭৩ জনের যোগদান সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নির্ধারিত কর্ম কৌশল ব্যাক্তিগত কর্মপরিকল্পনা (আইএপি)’র সাথে চুক্তি মাফিক ২০% ওয়ারেট খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। সাশ্রয়নীতির কারণেই দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। অথচ ১৬০ শ্রমিকের যোগদানে প্রতি মাসে কোটি টাকারও বেশী অতিরিক্ত বেতন গুনতে হবে চিনিকল কতৃপক্ষকে। তাহলে কোথায় গেলো সেই সাশ্রয়নীতির কর্মপরিকল্পনা ? জানা গেছে, ৩-৪ জন কানামনা বা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োজনকৃত শ্রমিকের হাজিরা সমান একজন স্থায়ী শ্রমিকের বেতন গুনতে হবে। এত অল্প হাজিরা দেয়ার পরও গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে কেরুজ চিনি কারখানায় লোকসান গুনতে হয়েছে ৭২ কোটি টাকা। স্মরণকালের রেকর্ড পরিমান কম আখ রোপনের কারণে আগামী আখ মাড়াই মরসুম রয়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে। ৪০-৪২ দিন হতে পারে আখ মাড়াই। ফলে আগামী মরসুমে চিনি কারখানায় লোকসানের বোঝা অনেক ভারী হতে পারে। এ দিকে এ খবর কেরুজ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে নিয়োজনকৃত চুক্তি ভিত্তিক ও কানামনা শ্রমিকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। অনেকেই চাকুরী স্থায়ীকরণ ও পাওয়ার আশায় শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে করেছেন আর্থিক লেনদেন, দিনের পর দিন নেতাদের দুয়ারে ধর্না দিয়েছেন তারা। এখন তারা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন। গুঞ্জন উঠেছে এরই মধ্যে নেতাদের কাছে চাপ দেয়া শুরু করেছে টাকা ফেরত পেতে। এ রকম সংবাদ শোনার পর থেকে নেতৃবৃন্দের কপালেও দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এ নিয়ে চরম বিশৃংখলার ঘটনাও ঘটার আশংকা রয়েছে। তবে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ বলেছেন, আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে সুষ্টু পরিবেশ বজায় রাখতে সদর দপ্তরের যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। তবে বিভিন্ন মিল থেকে যাতে অল্প কয়েকজনকে কেরুজ চিনিকলে দেয়া হয় সে প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।

Comments (0)
Add Comment