নানাভাবে প্রতারণা-হয়রানি : সিন্ডিকেটের মূলহোতা রানাসহ গ্রেফতার ৩ 

 

দর্শনা অফিস: দামুড়হুদা কুড়–লগাছির মাসুদ রানাসহ তিন সহযোগীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ অফিসার, কখনো সাংবাদিক ও কখনো মানবাধিকার কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ জাল টাকা তৈরির অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি এক এক দম্পতির নিকট ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করলে টাকা নিতে আসলে কৌশলে এই সিন্ডিকেটের এক সদস্যকে এলাকাবাসী আটক করে পুলিশের দেয়। এ সময় বাকি সহযোগীরা পালিয়ে গেলেও রাতভর দর্শনা থানা পুলিশ অভিযান চালিতে সিন্ডিকেটের মূলহোতা মাসুদ রানাসহ তার তিন সহযোগীকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে চাঁদার টাকা ও উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকেলে দর্শনা থানায় মাসুদ রানাকে প্রধান আসামি করে মোট ৫ জনের নাম উলে¬খ করে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী ওই নারী। এই সিন্ডিকেটের অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী। কেউ কোন প্রতিবাদ করলেই মারধর ও হয়রানির স্বীকার হতে হতো এই সিন্ডিকেটের হাতে। গতকাল মাসুদ রানাসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে।

পুলিশ বলছে মাসুদ রানার নামে, ছিনতাই, জাল টাকা তৈরির কাজে জড়িত, ভুয়া পুলিশ সিন্ডিকেট এবং চাঁদাবাজিসহ তার নামে দুই থানায় মোট ৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিই দর্শনা এবং বাকি একটি দামুড়হুদা থানায়। এরা একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের বাকি সদস্যদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের গতকাল বিকেলে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আটককৃতরা হলেন, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার কুড়–লগাছি গ্রামের বাজারপাড়ার মোতালেব হোসেনের ছেলে মাসুদ রানা (৩৫), একই গ্রামের হাসপাতালপাড়ার খোকা মিয়ার ছেলে মানিক (২৫) একই পাড়ার দোস্ত মোহাম্মদ শনির ছেলে আসাদুল (৩৫) ও গুলশানপাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুল¬াহ আল মুবিন (২০)।

জানা গেছে, মাসুদ রানাসহ ৬/৭ জনের সঙ্গবদ্ধ দল দীর্ঘদিন জেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। কখনো নিজেকে গোয়েন্দা পুলিশ, কখনো পুলিশের অফিসার, কখনো সাংবাদিক আবার কখনো বা মানবাধিকার কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়ে আসছিলো টাকা। দীর্ঘদিন তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ। গত বৃহস্পতিবার দামুড়হুদা উপজেলার কুড়–লগাছি গ্রামের মাঝপাড়ার সাইফুল¬াহ’র স্ত্রী সেলিনা খাতুনকে স্বামীর বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ তুলে এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তার নিকট থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেই এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

অপরদিকে, গত রোববার রাতে স্ত্রী সেলিনা খাতুনের বিরুদ্ধে অনৈক সম্পর্কের কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার স্বামী সাইফুল¬াহ’র নিকট ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে সাইফুল¬াহ এবং তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতিবেশীদের নিকট বিষয়টি জানায়। এর ঘণ্টা খানেক পর মাণ্টুদ রানাসহ ৫/৬ জন দাবিকৃত চাঁদার টাকা নিতে আসলে এলাকার লোকজন তাদেরকে ধাওয়া করে। এতে সবাই পালিয়ে পার পেলেও ধরা পড়ে এই চক্রের সদস্য মানিক। পরে রাত ১২টার দিকে খবর পেয়ে দর্শনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাবাসীর নিকট থেকে মানিককে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়। পরে মানিকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতভর অভিযান চালিয়ে জেলার বিভিন্নস্থান থেকে এই চক্রের মূলহোতা মাসুদ রানাসহ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে দর্শনা থানা পুলিশ। এ সময় তাদের নিকট থেকে চাঁদার নগদ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গতকাল সোমবার বিকেলে সেলিনা খাতুন বাদী হয়ে দর্শনা থানায় মাসুদ রানাকে প্রধান আসামি করে মোট পাঁচজনের নাম উল্লে¬খ করে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন।

দর্শনা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান কাজল বলেন, জালটাকা তৈরির কাজে জড়িত, ভুয়া পুলিশ চক্রের সদস্য এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে মূলহোতা মাসুদ রানাসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে ভুক্তভোগী সেলিনা খাতুন বাদী হয়ে দর্শনা থানায় মাসুদ রানাকে প্রধান আসামি করে মোট পাঁচজনের নাম উল্লে¬খ করে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচদিনের রিমান্ড ও চাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাসুদ রানার নামে গতকালের মামলাসহ মোট ৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিই দর্শনা এবং বাকি একটি দামুড়হুদা থানায়। এরা একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট। কখনো চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে মানুষের নিকট টাকা হাতিয়ে নিতো এই সিন্ডিকেটটি। এই সিন্ডিকেটের বাকি সদস্যদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

Comments (0)
Add Comment