পঁচা খাবার দেয়ার অভিযোগে চুয়াডাঙ্গার টিটিসি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে বিক্ষোভ

সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ১৪ দিনে পাঁচ হাজার টাকার খাওয়ার খরচ দিচ্ছেন ভারত ফেরতরা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে মানহীন খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল দুপুরের খাবার কোনো মতে খাওয়া গেলেও রাতে ভাতের সাথে যে মাছ দিয়েছে তাতে ছিলো পঁচা গন্ধ। বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েও ফল আসছে না। এই অভিযোগ চুয়াডাঙ্গা টিটিসিতে ১৪ দিন নিজ খরচে কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারত প্রত্যাগত বাংলাদেশি যাত্রীদের অনেকেরই। গতকাল বুধবার রাতে যা রূপ নেয় বিক্ষোভে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বন্ধ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এরমধ্যেও জরুরি চিকিৎসা নিতে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে স্থলপথে হাজার দেড়েক বাংলাদেশি বিশেষ ব্যবস্থায় ভারতে গিয়ে পড়ে বিপাকে। কারণ সেখানেও চলছে লকডাউন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ ব্যবস্থায় আটকেপড়া ওই বাংলাদেশি যাত্রীদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে। গত ১৭ মে থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনাসহ দেশের ৩টি স্থলসীমান্ত ও চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরতে শুরু করেন বাংলাদেশিরা। তবে শর্ত মোতাবেক দেশে ফেরা সবাইকে বিশেষ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে ১৪ দিন। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন করছে গোটা বিষয়ের তত্ত্বাবধান। সেই অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরা প্রায় সাতশো মানুষ অবস্থান করছেন চুয়াডাঙ্গার দুটি সরকারি ভবন ও কয়েকটি আবাসিক হোটেলের অস্থায়ী কোয়ারেন্টিন সেন্টারে।
এদের তিনবেলা খাবারের যোগান হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত তিনটি রে¯েঁÍারা থেকে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী থাকা খাওয়ার সব খরচ বহন করতে হচ্ছেন যাত্রীদের নিজেদেরকেই। আবাসন নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ না পাওয়া গেলেও সরবরাহকৃত খাবারের মান নিয়ে প্রথম থেকেই অভিযোগ উঠতে থাকে। গতকাল টিটিসি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে ক্ষোভ রুপ নেয় বিক্ষোভে। অনেকে টিটিসি ভবনের জানালা দিয়ে ফেলে দেন খাবার। যাত্রীদের অভিযোগ, যে মাছ খেতে দেয়া হয়েছে তা পচা দুর্গন্ধযুক্ত একদম খাওয়ার অনুপযোগী। হট্টগোলের খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুনিরা পারভীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের কর্তারা। বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করা হয় সবাইকে। পরিস্থিতি আসে নিয়ন্ত্রণে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোয়ারেন্টিনে থাকা বেশ কয়েকজনের অভিযোগ, চুয়াডাঙ্গায় কোয়ারেন্টিনে আসার প্রথম দু’দিন আমরা ভালোই ছিলাম। এরপর থেকে খাবার নিয়ে যা হচ্ছে তা রীতিমত অত্যাচার। তিনবেলা দেয়া হচ্ছে অখাদ্য ও পরিমাণে কম। গতকাল বুধবার সকাল থেকে তিনবেলা ছাড়া বিগত দিন সরববরাহকৃত খাবারের প্যাকেটের গায়ে লেখা ছিলো না কোন রেস্তোঁরার নাম। গতকাল দুপুরে যে মুরগির মাংস খেতে দেয়া হয়েছিলো তা খাওয়া যায়নি। রাতে তো পচা মাছ ছিলোই, খেতে না পেরে প্রতিবাদ করেছে সবাই খাবারের প্যাকেট ছুঁড়ে দিয়েছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাদের দিকে। অনলাইনে পছন্দের খাবার নেয়ার ব্যবস্থা নেই। পছন্দমতো কিছু যে আনাবো, তাও নিষেধ। আমরা তো কোনো অপরাধ করিনি! তাহলে কেন এই জেলখানার শাস্তি? অসংখ্যবার মৌখিক অভিযোগ, অনুরোধ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে তাতে কোনো কাজ হয়নি। আমাদের টাকা খরচ করে কেন অখাদ্য কেনা হচ্ছে?
কোয়ারেন্টিনে থাকা যাত্রীদের খাবারসহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা এনডিসি আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, মান যাচাই করে চুয়াডাঙ্গা শহরের তিনটি রেস্তোঁরাকে পর্যায়ক্রমে দেয়া হয়েছে সরবরাহের কাজ। তদারকিতে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন। বড় বাজারের হোটেল আল আমিন, ভোজন বিলাস এবং মেহমান হোটেল থেকে যাচ্ছে তিনবেলার খাবার। গতরাতে ১০-১২ জন যাত্রী মাছের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যরা কোনো অভিযোগ করেনি। কোয়ারেন্টিনে থাকা বাংলাদেশি যাত্রীদের কাছ থেকে থাকা খাওয়া বাবদ জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা জমা নেয়া হয়েছে। খাবার নিয়ে অভিযোগ ওঠায় এর আগে সরবরাহকারী হোটেল করা হয়েছে বদল। থাকা খাওয়াসহ যাত্রীদের দেখভালের বিষয়টির সাথে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের ভাবমূর্তি জড়িত। আজ থেকে খাবার সরবরাহ করবে রেডচিলি। গতকাল বুধবার রাতের খাবার সরবরাহকারী মেহমান হোটেলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্তের পর প্রয়োজনে আজ করা হবে সীলগালা।

Comments (0)
Add Comment