পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় ৪ জনের যাবজ্জীবন

মেহেরপুরের গাংনীতে চাঞ্চল্যকর হত্যা ও মাদক মামলার রায়

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে পুলিশ সদস্য আলাউদ্দীন হত্যা মামলায় ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন আদালত। এছাড়া মাদক মামলায় ওই চারজনকে সাত বছর করে কারাদ- দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাস এ আদেশ দেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুষ্টিয়ার বলিদাপাড়া গ্রামের আনিচ মিয়া, তাহাজ্জত হোসেন, শাকিল হোসেন ও রুবেল আলী। মাদক মামলায় অপর দুই আসামি সিদ্দিক আলী ও আতিয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেয়া হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ জুলাই সন্ধ্যা ৭টায় মেহেরপুর গাংনী উপজেলার পিরতলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এএসআই সুবির রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্য আলাউদ্দীন ও জাহিদ হোসেন রাতে পাহারার জন্য সাহেবনগর গ্রামের মোড়ে পৌঁছান। এ সময় খবর আসে কাজিপুর গ্রাম হয়ে ফেনসিডিলসহ একটি মাইক্রোবাস বামুন্দীর দিকে আসছে। এ সময় সেখানে গাছের তিনটি গুঁড়ি ফেলা হয় মাইক্রোবাসটি থামানোর জন্য। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মাইক্রোবাসটি ঘটনাস্থলে আসে। গাড়িটি থামানোর জন্য সিগন্যাল দেয় পুলিশ। মাইক্রোবাসটি সিগন্যাল অমান্য করে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ সদস্য আলাউদ্দীন শর্টগান দিয়ে আঘাত করে মাইক্রোবাসটির চালকের দরজার গ্লাস ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় চালক ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে আলাউদ্দীনকে ফেলে দেন। তিনি ছিটকে মাইক্রোবাসের বাম্পারের ওপর পড়েন। ওই গাড়ি থেকে দুটি বস্তা ফেলে দেন গাড়িচালক এবং তার সঙ্গে থাকা সদস্যরা। এ সময় আলাউদ্দীনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। মাইক্রোবাসটি ধরার জন্য বামুন্দী পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা গাড়িটিকে ধাওয়া করেন। এতে অংশ নেয় কুষ্টিয়ার মিরপুর থানা। একপর্যায়ে গাড়িটি মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া গ্রামের আনিচের বাড়ির পাশে বাঁশবাগানের পাশে ফেলে তারা পালিয়ে যান। এ সময় ওই গাড়ি থেকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। ফেলে দেয়া দুটি বস্তা থেকে জব্দ করা হয় ৩৪০ বোতল ফেনসিডিল। এদিকে ওই ঘটনায় রাতেই কুষ্টিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আলাউদ্দীন। বলিদাপাড়ার আনিচ ও শাকিল হোসেনকে আসামি করে ২৫ জুলাই গাংনী থানায় একটি মাদক ও হত্যা মামলা করেন ক্যাম্প ইনচার্জ এএসআই সুবির রায়। তদন্তভার পড়ে গাংনী থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর মুক্তার হোসেনের ওপর। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওই দুই মামলায় ২৯ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। হত্যা মামলায় আসামি করা হয় বলিদাপাড়ার আনিচ, তাহাজ্জত হোসেন, শাকিল হোসেন ও রুবেল হোসেনকে। আর মাদক মামলায় আসামি করা হয় ওই চারজনসহ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রামের সিদ্দিক হোসেন ও আতিয়ার রহমানকে।

হত্যা মামলায় ১৬ ও মাদক মামলায় ১২ জন সাক্ষ্য দেন। হত্যা মামলায় ওই চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদ- দেয়া হয়। এ ছাড়া মাদক মামলায় তাদের ৭ বছর করে কারাদ- দেন আদালত।

মামলায় সরকার পক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী শহিদুল হক এবং আসামি পক্ষে মারুফ আহম্মেদ বিজন, কামরুল হাসান ও খন্দকার আব্দুল মতিন আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন।

সরকার পক্ষের আইনজীবী কাজী শহিদুল হক বলেন, মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক ৪ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন। এটি ন্যায় বিচারের একটি প্রতীক হয়ে থাকবে।

আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মারুফ আহমেদ বিজন বলেন, রায় ভালো হয়েছে। তবে মামলার তদন্তকারী অফিসার যথেষ্ট ত্রুটি রেখে চার্জশিট দিয়েছেন। আমরা পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে যাবো।

Comments (0)
Add Comment