বিএমআরই প্রকল্পের পিডি হলেও বেতন নিচ্ছেন কেরুজ কোষাগার থেকে

কেরুজ চিনিকল ডিস্টিলারি বিভাগের জিএম বাদশা’র অতিরিক্ত পদে দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন

দর্শনা অফিস: কেরুজ চিনিকলের বিএমআর প্রকল্পের পরিচালক হলেও কোনো আদেশ ছাড়াই ডিস্টিলারি বিভাগের মহাব্যবস্থপকের আকড়ে ধরে আছেন ফিদা হাসান বাদশা। শুধু তাই নয় চিনিকলের কোষাগার থেকে তুলছেন বেতন-ভাতাও। কোন খুঁটির জোরে তিনি অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন তা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছ থেকে শোনা গেছে, ডিস্টিলারিতে বেতনের চাইতে সুবিধা বেশি থাকায় তিনি ছাড়তে চান না লোভনীয় ওই চেয়ারের মায়া। এতে দিন দিন আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন তিনি। নানা অনিয়ম দুর্নীতি আর লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের ৬টি চিনিকল। আরও ৩টি চিনিকল বন্ধের দারপ্রান্তে। দুর্নীতি আর ব্যায় কমাতে চিনিশিল্প নিয়ে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের কর্তারা। লোকশানের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান কেরুজ চিনিকল। তবে কিছু কর্মকর্তার কারণে লোকশান গুনতে হয় প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনো বিভাগে। কেরুজ চিনিকলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে অন্যতম মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি) পদটি। এ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ফিদাহ হাসান বাদশা দীর্ঘ ১৮ বছর ঘুরে ফিরে অবস্থান করছেন একই প্রতিষ্ঠনে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন থেকে ফিদাহ হাসান বাদশাকে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নিয়োগ দেয়া হয় চিনিকলের বিএমআরই প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) হিসাবে। অথচ তিনি তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জায়েদ আলী আনছারীর মৌখিক আদেশ বলে ২০১৯ সালের ২৬ মে ডিস্টিলারি বিভাগে মহাব্যবস্থাপক পদে দায়িত্ব সাময়িক সময়ের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ডিস্টিলারী প্রধানের চেয়ারে বসে বেতনের তুলনায় অতিরিক্ত আয় বেশী হওয়ায় ব্যবস্থাপক পদে থেকেও আকড়ে ধরে আছেন মহাব্যবস্থাপকের পদটি। সেই থেকে অদ্যবদি বিএমআর প্রকল্পের পিডি হলেও অতিরিক্ত পদে ডিস্টিলারির জিএম হিসেবে দায়িত্ব¡ পালন করছেন অদৃশ্য ক্ষমতা বলে। শুধু তাই নয় অফিস আদেশে তিনি কোথা থেকে বেতন ভাতাদি পাবেন তা উল্লেখ না থাকলেও কেরুজ চিনিকলের কোষাগার থেকে প্রতি মাসে ৮৫ হাজার ১২০ টাকা হারে বেতন উত্তোলন করছেন। সে হিসেবমতে যোগদানের পর থেকে তিনি চিনিকলের কোষাগার থেকে ২৬ লাখ ৩৮ হাজার ৭২০ টাকা  উত্তোলন করেছেন। প্রকল্প পরিচালক হয়েও প্রকল্প থেকে বেতন না নিয়ে কোন শক্তি বলে চিনিকল থেকে বেতন ভাতাদি নিচ্ছেন তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিস্টিলারি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা রশিকতা করে বলেন, এখানে বেতনের চাইতে মাইনে বেশি, খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী। তবে কি ছাড়তে চান মধু মাখানো ওই চেয়ার? প্রতিবছর ডিস্টিলারি বিভাগে কোটি কোটি টাকার মালামাল ক্রয় হয়ে থাকে। আর এসব মালামাল ক্রয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে ফিদাহ হাসান বাদশা। প্রধানকে খুশি না করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালামাল সরবরাহ কোনোভাবেই সম্ভব না এ যেনো তিনি নিয়মে পরিণত করেছেন। সে সুযোগ নিতেও কম করেনি ঠিকাদারী বহু প্রতিষ্ঠান। মানহীন মালামাল সরবরাহ করা হয় দেখভালকারী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই। অভিযোগ উঠেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিস্টিলারিতে ফাতেমা এন্টার প্রাইজের বোতল সরবরাহ নিয়ে তেলেসমাতি কারবার ঘটেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বোতল মানহীন বোতল নিতে সুপারিশ করেছিলেন ফিদাহ হাসান বাদশা। তা নিয়ে রীতিমত হৈ চৈ পড়ে যায় কেরুজ এলাকায়। তবে এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কেরুজ চিনিকলের লাভজনক বিভাগ ডিস্টিলারির গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ফিদাহ হাসান বাদশাকে অপরারণের দাবী এখন সর্বমহলের।

Comments (0)
Add Comment