বিদ্যালয় বন্ধ : অলস সময়ে শিক্ষার্থীদের হচ্ছে সর্বনাশ

আনোয়ার হোসেন: বিদ্যালয় বন্ধ। অনলাইন শিক্ষাক্রম সর্বস্তরে পৌছুয়নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের কাটছে অলস সময়। কেউ সেলফোন, কম্পিউটার কিম্বা ট্যাবে মেতেছে অনলাইন খেলায়, কেউ মেতেছে পাড়া মহল্লার সুবিধাজনকস্থানে কাঁচের ঘুটি বা অন্য কোন খেলায়। করো কারো মধ্যে একাকিত্বের কারণে বাসাবাধতে শুরু করেছে বিষন্বতা। বিপথগামীও হচ্ছে কেউ কেউ।
গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে ১৭ মাসের অধিক হতে চললো, বিদ্যালয়গুলো বন্ধ। কবে নাগাদ খুলবে তা এখনও পর্যন্ত অনিশ্চিত। শিক্ষার্থীদের টিকা করণের পরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা থাকলেও এ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে কবে? করোনা ভাইরাস মহামারির মহা সংকটের গভীরে হাবুডুবু খাচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবসহ শিক্ষার্থীদের পরবর্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরানোর বিষয়টিও। চলতি বছরের ২২ মার্চ থেকে দেশের প্রথম সারির ১৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছয়টি পদ্ধতিতে ভার্চুয়াললি ক্লাস নিচ্ছে। ধীরে ধীরে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনমুখী হবে বলে জানা গেছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এভাবে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার অবস্থার মধ্যে থাকলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দুই হাজারের বেশি কলেজের বিরাট অঙ্কের শিক্ষার্থীর লেখাপড়া পড়েছে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়েগুলো বন্ধ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনে ক্লাস করানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই রয়েছে এ কার্যক্রমের বাইরে। প্রশ্ন ক্রমশ জোরদার হচ্ছে, মাধ্যমিক, প্রাথমিক, ও প্রি প্রাইমারির শিক্ষার্থীদের কী হবে? মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে রেকর্ডিং করা ক্লাস প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ও ব্যস্ত রাখতে এটা নতুন উদ্যোগ।
একটি প্রবাদ আছে, ‘অলস মস্তিস্ক শয়তানের বাসা।’ তাই তাদের ব্যস্ত রাখতেই হবে। আর শিশুরা তো শুধু শুধু কোনোভাবেই বসে থাকতে পারে না, তাদের কিছু না কিছু করা চাই। নিঃসঙ্গতা একটানা দীর্ঘস্থায়ী রূপ ধারণ করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। তাছাড়া শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের পক্ষে পরবর্তী ধাপের পাঠ নেওয়া কঠিন হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিৎ বলে অনেক অভিভাবক যেম মনে করেন, তেমনই অনেকেই বলেছেন, আগে জীবন পরে অন্য কিছু।
বিদ্যালয় বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের বশে রাখা দিন দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। হয় অনলাইনে গেমে আসক্তি, না হয় মহল্লার সাথীদের নিয়ে দিনের সিংহভাগ সময়ে গুটি খেলায় মেতে থাকা। যারা সশরীরে ফুটবল কিম্বা অন্য কোন খেলায় মাতছে তাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি না থাকলেও অনলাইনে গেম আসক্তি ভয়ানক পরিনতিরই পূর্বাভাস মিলছে।

Comments (0)
Add Comment