স্টাফ রিপোর্টার: বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে লোকজনকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়া বা পুশইন অব্যাহত রেখেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গতকাল মঙ্গলবারও দেশের পাঁচ সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ আরও ৯৩ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ৪ মে থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ৮৩৩জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিল বিএসএফ। এরমধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে ১২ জন ও মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্তে ৩০জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়াও সাতক্ষীরা সীমান্তে ২৩, কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৩৬জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভীষণ সীমান্ত দিয়ে ১৭জন বাংলাভাষীকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেয় বিএসএফ। আটককৃত সবাই বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিয়েছেন।
মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের অভিযোগে ঝিনাইদহে নারী ও শিশুসহ ১২জনকে আটক করেছে বিজিবি। আটককৃতদের মধ্যে ৭জন নারী ও ২জন শিশু। এছাড়া পৃথক মাদক বিরোধী অভিযানে ৪৯০পিস উত্তেজক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের সহকারী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত কোয়ার্টার মাস্টার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এর পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আটক পুরুষ বাংলাদেশিরা হলেন নড়াইলের কালিয়া থানার আটলিয়া গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে শাহিনুর রহমান সবুজ (২৫), যশোরের অভয়নগরের মশিয়াহাটি গ্রামের দিল্লীশ্বর বিশ্বাসের ছেলে দীনেশ বিশ্বাস (৪৫) এবং বাগেরহাটের ফকিরহাট থানার ডহর মৌতোগ গ্রামের গৌরাঙ্গ মজুমদারের ছেলে গৌরব মজুমদার (২১)। বিজিবি জানিয়েছে, মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের অধীন কুমিল্লাপাড়া, বাঘাডাঙ্গা, বেনীপুর ও খোসালপুর বিওপি পৃথক অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ও ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগ ১২জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ৭জন নারী ও ২জন শিশু রয়েছে। আটক সকলেই বাংলাদেশি নাগরিক। আটককৃতদের মহেশপুর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এছাড়া রাজাপুর বিওপি’র হাবিলদার আকরাম হোসেনের নেতৃত্বে মাদকবিরোধী অভিযানে ৪৯০পিস উত্তেজক ট্যাবলেট উদ্ধার করে বিজিবি। তবে এঘটনায় বিজিবি কাউকে আটক করতে পারেনি। মহেশপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, মামলা দায়েরের মাধ্যমে আটককৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।
মুজিবনগর প্রতিনিধ জানিয়েছেন, মেহেরপুরের মুজিবনগরের আনন্দবাস সীমান্ত দিয়ে নারী শিশুসহ ৩০জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করলে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে আটক করে। আটককৃতরা সকলেই বাংলাদেশি বলে জানা গেছে। চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক ব্যাটালিয়নের কোম্পানী পরিচালক নাজমুল হাসান জানান, ফেরত পাঠানোদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের আটক করে এবং পরে সীমান্তে এনে পুশব্যাক করে। অধিকাংশের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায় বলে জানা গেছে। আটকৃত হল, কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বর থানার টগরপাড়া গ্রামের আজহারুল ইসলাম এর ছেলে বজলে (৪০), বজলের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৩৫), মেয়ে মর্জিনা খাতুন (৯), মিম (৪), ছেলে রাসেল (২১) এবং ববিতা (১৫), নাতি ওবাইদুল (৮)। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি থানার কাশিয়াবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে শাহানুর (২৯), স্ত্রী কল্পনা (২৭) এবং ছেলে নুর ইসলাম (৯)। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানার বালাসিপাড়া গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে ইছা আলী (৪৪), স্ত্রী আকলিমা বেগম (৪০), ছেলে আরিফ (১৯), ইব্রাহীম (১৫), ইসমাঈল (৮) এবং ছেলে আরিফের স্ত্রী সুমনা (১৫)। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী থানার নগরাজপুর গ্রামের আকবর আলীর ছেলে আলিমুদ্দিন (৫৫), স্ত্রী আমিনা (৪৫), ছেলে আতিকুল (২৫), আতিকুলের স্ত্রী ইয়াসমিন (২০), ছেলে ইয়াসিন (৫), ইয়ানুর (২) এবং মেয়ে ফাতিমা (১)। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী থানার ঘোগারকুঠি গ্রামের বাটালের ছেলে হুজুর আলী (৪০), স্ত্রী মনিরা (৩৫), ছেলে মনির হোসেন (৭), মেয়ে আদুরি (৩), হালিমা (১৮), নাতি হামিম (২)। বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া মানুষদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, তারা বাংলাদেশের নাগরিক দীর্ঘ ১২/১৪ বছর আগে দালালের মাধ্যমে কাশিয়াবাড়ি সীমান্ত দিয়ে কাজের সন্ধানে তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে পরিবার নিয়ে বসবাস করত এবং সেখানে বিভিন্ন ইট ভাটায় কাজ করতেন। গত ছয়-সাত দিন আগে তাদেরকে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের পুলিশ বিভিন্ন এলাকার ইটভাটা থেকে আটক করে গাড়ি করে নিয়ে এসে গতকাল মঙ্গলবার ভোরবেলায় সীমান্ত দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেয়া হয়। এ বিষয়ে মুজিবনগর থানার তদন্ত অফিসার জাকির হোসেন জানান, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিএফএস তাদেরকে সীমান্তের কাঁটাতার পার করে দেয় পরে বিজিবি তাদের আটক করে মুজিবনগর থানায় হস্তান্তর করে হয়ে তারা এখন থানা হেফাজতে আছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে গত ২৫ মে ১৯ জন নারী পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশের ঠেলে দেয় বিএসএফ। তারাও কাজের জন্য বিভিন্ন সময় ভারতে গিয়েছিলো।