মামাতো ভাইকে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা

বাজার গোপালপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে ফারাজের জমি নিয়ে ফুফাতো ভাইয়েরা নগ্ন হামলা চালিয়ে মামাতো ভাই গোলাম রসুলকে (৩৪) ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করেছে। দীর্ঘদিনের বিরোধ মীমাংসার জন্য এলাকার ম-ল মাতবরদের ডাকে সাড়া দিয়ে সালিস শেষে বাড়িতে ফেরার পথে সংঘবদ্ধ ফুফাতো ভাইদের হামলার শিকান হন নিহত গোলাম রসুল। তারা ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করার পর রাস্তার পাশেই কলা বাগানে টেনে হেছড়ে নিয়ে আবারও ইট দিয়েই আঘাত করে মাথার পেছন দিকে থেঁতলে দেয় তাকে। তার চিৎকারে লোকজন ছুটে এসে চিকিৎসার জন্য প্রথমে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে গত সোমবার রাতে মারা যান তিনি।

অভিযুক্ত

গ্রামবাসী জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামের মাঠপাড়ার মৃত মোজাম্মেল হক পরিবারের সাথে একই পাড়ার সিরাজ ও কাদেরের দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিলো। এক পর্যায়ে তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু বছর খানেক আগে মোজাম্মেল হক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ সাময়িক আপস হয়। এসময় মোজাম্মেল হকের দুই ছেলে কুয়েত প্রবাসী বাড়িতে ফিরে আসেন। কিছুদিন পর বড় ছেলে আবার কুয়েতে কাজে যোগদান করলেও ছোট ছেলে গোলাম রসুল বাড়িতে থেকেই কৃষি কাজ দেখভাল করতেন। মোজাম্মেল হক মারা যাওয়ার পর কিছু দিন বিরোধ কমলেও পরে আবারও বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে গত রোববার সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে জিয়ানগর বাজারে মীমাংসার জন্য সালিস ডাকেন সিরাজ ও কাদের। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতির কথা শুনে সালিসে হাজির হন গোলাম রসুল। সালিসে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ সিদ্ধান্ত করেন যেহেতু কোর্ট গোলাম রসুলের পরিবারের দিকে রায় দিয়েছে, তাই এ সিদ্ধান্ত তাদের মেনে নেয়া উচিত। এক পর্যায়ে এমন সিদ্ধাতে সালিস বৈঠক শেষ হয়। পরে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সময় ওত পেতে থাকা সংঘবদ্ধ ঘাতকেরা তার উপর নগ্ন হামলা চালায়। এসময় তারা মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে টেনে হেছড়ে পাশে কলা ক্ষেতে নিয়ে আবারও ইট দিয়ে মাথা থেতলে গুরুতর আহত করে।
নিহতের মা নুর জাহান জানান, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রবাসী এক ছেলে ও বাড়িতে ছোট ছেলে গোলাম রসুল এবং তাদের বউ সন্তানদের নিয়ে দিন চলে যাচ্ছিলো। ঘটনার দিন গণ্যমান্য ম-ল মাতবররা তাদের বিরোধ মিটিয়ে দেবে, সে জন্য সন্ধ্যায় মিটিং আছে বলে ছেলেকে ডেকে যাই। দিনের বেলায় মিটিং করার কথা বললেও তারা কোনো কথা শুনেনি। পরিকল্পনা করে সন্ধ্যারাতে মিটিং ডেকে তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি আরও জানান, অল্প বয়সেই বিধবা হলো তার স্ত্রী। শিশু দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন (৭) ও মেয়ে রোজা (২) কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই তার পিতাকে হারালো। কে? তাদের দেখাশোনা করবেন, আদর করবেন। এ কথা বলতে বলতে সারাক্ষণ মুর্ছা যাচ্ছেন তিনি। তিনি হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি করেন।
স্থানীয় মেম্বার রিপন হোসেন জানান, এলাকার গণ্যমান্যদের মীমাংসার জন্য ডেকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হয়ে গোলাম রসুল নিহতের বিষয়টি আসলে খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক (তদন্ত) নিহতের ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Comments (0)
Add Comment