স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে পাথর মেরে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে। গত দুইদিন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। ক্ষোভ, প্রতিরোধ আর প্রতিবাদের গর্জন ছিল শিক্ষাঙ্গণে। হত্যাকা-ে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতারা ঐ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এছাড়া ছাত্র-জনতার ব্যানারে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
চুয়াডাঙ্গায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিপ্লবী ছাত্রসমাজ। গতকাল শনিবার বিকেল ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীরা জানান, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তারা সব সময় সোচ্চার থাকবেন। প্রতিবাদ সমাবেশে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সাফফাতুল ইসলাম বলেন, কোন এক শকুনের দল যেন বাংলাদেশের পতাকা যেন পুণরায় খামছে ধরেছে। আপনারা দেখেছেন মিটফোর্ডের সামনে সোহাগ নামের একজনকে পাথর মেরে কতটা নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই পাথরের ভার শুধু যে সোহাগ ভাইয়ের বুকে কিন্তু না, এই পাথরের ভার আজকে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ছাত্রসমাজ নিজেদের বুকে তুলে নিয়েছে। খুনির কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারেনা। কোনো নির্দিষ্ট দলের খুনি থাকতে পারেনা। খুনির পরিচয় একমাত্র তিনি খুনি। তিনি আরও বলেন, কোন রাজনৈতিক দল, কোন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়াই যদি কেউ খুন, গুম, ধর্ষণ করে শুধু মাত্র বহিষ্কার হয়ে ওই রাজনৈতিক দল দ্বায় এড়ানোর চেষ্টা করে, তবে বাংলাদেশের জনগণ আপামোর ছাত্রজনতা কখনোই সেটা মেনে নেবেনা। ওই রাজনৈতিক দলকে এই হত্যার দ্বায় অবশ্যই নিতে হবে। আমরা এই সরকারের প্রতি অনেক আস্থাশীল ছিলাম, আমরা ধৈর্য্যশীল ছিলাম, আমাদের অনেক চাপ ছিল। আমরা এখনো বলতে চাই, আপনারা অতিদ্রুত এই নৃশংস হত্যাকা-ের বিচার করুন। প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দুই মাসের মধ্যে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। ফাঁসি দিন, নতুবা বাংলাদেশের জনগণ আপামর ছাত্রসমাজ যেভাবে আজ বাংলাদেশের ভার্সিটি থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে পড়েছে আপনারা এই গণজোয়ার ঠেকাতে পারবেন না। আমরা বিচার নিয়েই ঘরে ফিরবো। আরেক শিক্ষার্থী ছাব্বির তার বক্তব্যে বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি ১০ পার্সেন্ট থেকে শুরু করে তার অসংখ্য বদনাম। এখন চাঁদাবাজিদের তিনি যেভাবে আশ্রয় দিচ্ছেন আমি এখান থেকে স্পষ্ট বলতে চাই, যে আন্দোলন শুরু হয়েছে চারদিকে যে গণজোয়ার শুরু হয়েছে, আপনি ল-নে বসে না থেকে আপনি দেশে আসেন। আপনার জানের যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে আপনি বলেন রাজনীতি করবেন না। আপনার নাম ভাঙিয়ে এই রাজনীতি বন্ধ করুন। অবিলম্বে এই রাজনীতি বন্ধ করতে হবে আপনাকে। বর্তমান মবের নামে বিএনপি যেটা শুরু করেছে তার নাম না নিলেই নাই। তবে বিএনপি যেটা শুরু করেছে এই আদর্শ কখনোই জিয়াউর রহমানের সাথে যায়না। আপনাদেরকে জিয়াউর রহমানের আদর্শে ফিরে আসতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে জিয়াউর রহমানের আদর্শে রাজনীতি করতে হবে। নতুবা আপনাদেরকে দরকার নাই। কোনো নির্বাচন হতে পারেনা। আমার ভাইয়ের বিচার হয় নাই। আপনারা তারপরেই খুন-গুম শুরু করেছেন। পুরনো খুনেরই বিচার করতে পারেনি আপনি কিভাবে আমার ভাইয়ের বুকে পাথর মেরে হত্যা করেন। সোহাগের বুকে পাথর মেরে হত্যা করে দেশের ছাত্রজনতা যে আশায় ২৪ সালের জুলাইতে রাজপথে নেমেছিল, বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তা প্রতিনিয়ত ভঙ্গ করে চলেছে। মিটফোর্ডে যুবদল নেতা যে নৃশংস হত্যাকা- ঘটিয়েছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।
প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন-শিক্ষার্থী তাসলিম আল মাহমুদ, সাইফুল্লাহ সাদিক সৌরভ, মুশফিকুর রহমান, ফাহিম উদ্দীন মভিন, মাহাবুব ইসলাম আকাশ, আব্দুল্লাহ আল কাফি, ইব্রাহিম মাসুম, নাহিদ জাভেদ, ইউসুফ আল সাফিন, সালমান ফার্সি, মেজবাউর রহমান রনক, হিমেল, তৌফিক আহাম্মেদ, সোয়াদ, হাসনা জাহান খুশবু, আনিতা, তাসনিয়া আফসিন, নুসরাত জাহান মৌলি, আঞ্জুম হাবিবা সহ আরও অনেকে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, পাথর নিক্ষেপ করে নির্মমভাবে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার ঘটনায় জীবননগরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার বিকেল ৫টায় জীবননগর বাসস্ট্যান্ড উন্মুক্ত চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়, যা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে ফিরে আসে। সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জীবননগর উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, ‘জুলাই মাস এখনো শেষ হয়নি, এর মধ্যেই সোহাগের মতো এক ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব ভিডিও দেখেছি, তা দেখে চোখের পানি ধরে রাখা যায়নি। যারা একজন ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে হত্যা করতে পারে, তাদের হৃদয়ে বিন্দুমাত্র দয়া-মায়া নেই। তারা চরম নিষ্ঠুর।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি এই হত্যাকা-ের বিচার না হয়, তাহলে সারা দেশের ছাত্রসমাজ আবারও আন্দোলনে নামবে। বাংলাদেশের বৃহত্তম দলকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই-এই চাঁদাবাজি বন্ধ করুন, মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। তা না হলে আপনাদের পরিনতিও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মতো হবে।’ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ জীবননগর উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা কে এম সাইফুল্লাহ, একই সংগঠনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ, জুলাই যোদ্ধা এস এম মুস্তাফিজুর রহমান এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জীবননগর উপজেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা লুৎফর সরকার। বক্তারা এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একইসাথে তারা স্থানীয়ভাবে চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকা-ে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে মেহেরপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে মেহেরপুরের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, শিক্ষার্থী এবং সচেতন নাগরিকরা অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের হাতে একজন সাধারণ ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটি শুধু একটি পরিবারের জন্য শোকের ঘটনা নয় বরং দেশের প্রতিটি ব্যবসায়ীর জন্য এক ধরনের হুমকি। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। বক্তারা আরও বলেন, সোহাগ হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্র এবং বিচারব্যবস্থাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। এ ঘটনা নিছক একটি হত্যাকা- নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রশ্ন। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড বহন করেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল “সোহাগ হত্যার বিচার চাই, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও, ব্যবসায়ী হত্যার রাজনীতি বন্ধ করো” ইত্যাদি সেøাগান।