মেহেরপুরে বিষের বোতল নিয়ে ডিসির কার্যালয়ে দাদা ও নাতি

মেহেরপুর অফিস: ‘হয় আমাকে আমার বসতবাড়ীতে ফিরে যেতে দিতে হবে, নতুবা আমাকে আত্মহত্যার অনুমতি দিতে হবে।’ এমন আবেদনপত্র নিয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ মুসা করিম ও তার নাতি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিষের বোতল নিয়ে আত্মহত্যার আবেদনপত্র জমা দেন জেলা প্রশাসক ড. মো. মুনসুর আলম খানের কাছে। বৃদ্ধ মুসা করিম মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের মৃত ফজের হালসানার ছেলে।
বুদ্ধ মুসা করিম বলেন, আমার যে জায়গা-জমি ছিলো, সেগুলো সবার নামে সমবন্টন করে দিয়েছি। অবশিষ্ট ছিলো বাড়ির ৪ শতক জমি। সেটি আমার বড় ছেলের ২য় স্ত্রীর ছেলে (আমার নাতি) আকাশের নামে লিখে দিয়েছি। বিষয়টি জানতে পেরে আমার বড় ছেলের প্রথম স্ত্রী আসমা খাতুন, তার ছেলে রিপন ও ফারুক আমাকে ও আমার নাতি আকাশকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। সমাজপতিসহ এলাকার অনেকের কাছে বিচার চেয়েও কোনো ফল হয়নি। কেউ আমাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি। যে কারণে বাধ্য হয়ে বিষের বোতল হাতে নিয়ে আত্মহত্যার অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছি।
আক্ষেপের সুরে তিনি আরও বলেন, আমার ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তবে বড় ছেলের প্রথম স্ত্রী আসমা খাতুন ও তার দুই ছেলে দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে চায় না। তাই এই বৃদ্ধ বয়সে আমি বাড়ি ছাড়া, অসহায় অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, যারা বৃদ্ধ মুসা করিমের হাতে বিষের বোতল দিয়েছে, তারা ভুল করেছে। বিষের বোতল হাতে নিয়ে মৃত্যুর আবেদন- এটা কোনো সমাধান নয়। বরং আমরা যারা সচেতন মানুষ, তাদের উচিত ছিলো আগে বিষের বোতল বৃদ্ধ মুসা করিমের কাছ থেকে সরিয়ে নেয়া। বিষয়টি সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বৃদ্ধের হাত থেকে বিষের বোতল নিয়ে নেয়া হয়েছে এবং তাকে আশ্বস্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী আসাদুজ্জামান সেলিম বলেন, আমরা কোমরপুর গ্রামে মুসা করিমের বাড়িতে যায় এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিষয়টি জানায়। দীর্ঘ ৬ মাস যাবৎ কোনো প্রতিকার না পেয়ে আজকে মুসা করিম ও তার নাতীকে নিয়ে বিষের বোতল হাতে নিয়ে আত্মহত্যার জন্য অনুমতি চেয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন।
এ বিষয়ে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন সরকার বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা প্রাপ্তির পর পরই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃদ্ধকে সব ধরনের আইনগত সহায়তা দেয়া হবে।

Comments (0)
Add Comment