২১৬ আসনের সীমানায় ইসি হাত দেবে না

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া ওপর আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত ৪ দিনে ৩৩ জেলার ৮৪ আসনের ওপর ১৮৯৩টি আবেদনের শুনানি হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮৫টি আবেদন পুনর্নির্ধারিত আসনের বিপক্ষে ছিল। আর পক্ষে ছিল ৭০৮টি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, জাতীয় সংসদের চূড়ান্ত সীমানা তালিকা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। ৮৪টি আসনের ওপর আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলোর সীমানায় পরিবর্তনের বিষয়ে ইসি বিবেচনা করবে। বাকি ২১৬টি আসনের সীমানা পরিবর্তনে ইসি হাত দেবে না।

জাতীয় সংসদের ৪০টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে ৩০ জুলাই খসড়া তালিকা প্রকাশ করে ইসি। ওই খসড়ার ওপর ১০ আগস্ট পর্যন্ত জমা আবেদনের ওপর ৪ দিন ধরে নির্বাচন কমিশনে শুনানি হয়। গতকাল শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, খসড়ার সীমানার ওপর অপত্তি আগে শুনেছি। আবার খসড়া সীমানার পক্ষে যে বক্তব্য এসেছে সেগুলোও শুনেছি। শুনানিতে যে মতামত পেয়েছি তা আমরা লিপিবদ্ধ করেছি। এখন পর্যালোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করব।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, আমরা সবাইকে শোনার চেষ্টা করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, ৮৪টি আসন সম্পর্কিত আবেদন শুনানি করেছি। ৮৪টি আসন নিয়েই আপত্তি। যেখানে আপত্তি নেই, সেখানে (যেসব আসনে) আমরা হাত দেব না।

শুনানির প্রথম দিনে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপির একাংশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনাকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে ইসি সচিব বলেন, এটা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত, না হওয়াটাই বাঞ্ছনীয় ছিল। অনেক কিছুই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে সামনে এসে পড়ে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে একটা সাধারণ ডায়েরি করেছি, যেখানে আমরা পুলিশকে দায়িত্ব দিয়েছি। পুলিশকে বলেছি, আপনারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

এর আগে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চতুর্থ দিনের মতো শুনানি হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির ও চার নির্বাচন কমিশনার এতে উপস্থিত ছিলেন। এদিন ১২টি জেলার ১৮টি সংসদীয় আসনের ২৬০ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। ২৬ আগস্ট মঙ্গলবার ৬টি জেলার ২৮টি আসনের ওপর ৩০৯টি আবেদন, ২৫ জুলাই সোমবার ৯টি জেলার ২০টি আসনের ৫১৩টি আবেদন এবং ২৪ জুলাই ৬ জেলার ১৮টি আসনের ৮১১টি আবেদনের ওপর শুনানি হয়।

শেষ দিনের শুনানি : গতকালের শুনানিতে সিরাজগঞ্জে একটি আসন বাড়ানোর দাবি করেছেন আবেদনকারীরা। সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় ২০০১ সাল পর্যন্ত ৭টি আসন ছিল। ২০০৮ সালে একটি আসন কমিয়ে ৬টি আসন করা হয়। আমাদের দাবি, আগে চৌহালী উপজেলা ও শাহাজাদপুর উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের চারটা ইউনিয়ন মিলে যে সিরাজগঞ্জ ছয় আসন ছিল সেটা আমরা ফিরে পেতে চাই।

জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন আসন সীমানায় পুনর্বিন্যাসের দাবি জানিয়ে বলেন, বর্তমানে সাথিয়া উপজেলা ও বেড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে পাবনা-১ আসন। বেড়া উপজেলার অপরাংশ ও সুজানগর উপজেলা নিয়ে পাবনা-২ আসন। আমরা শুধু সাথিয়া উপজেলা নিয়ে পাবনা-১ আসন চাই। একই সঙ্গে বেড়া ও সুজানগর নিয়ে পাবনা-২ আসন চাই। এই দুইটি আসন বিন্যাসের প্রস্তাব ২০১৮ সালে ছিল কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।

ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানার বিষয়ে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ২০০১ সাল পর্যন্ত চরভদ্রাসন ও সদরপুর দুটি উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন ছিল। আমরা ফরিদপুর-৪ আসন ২০০১ সালের মতো ফিরে পেতে চাই। একইসঙ্গে ভাঙ্গা উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৫ আসন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

শুনানি শেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৮ সালের আগে সব নির্বাচনে সদরপুর ও চরভদ্রাসন ফরিদপুর-৪ এবং ভাঙ্গা উপজেলা নিয়ে নিয়ে ফরিদপুর-৫ আসন ছিল। আমরা আগের মতো আসন বিন্যাস চাই। কিন্তু ২০০৭ সালে এসে এক-এগারো সরকারের সময় তিনটি উপজেলা নিয়ে একটি আসন করা হয়েছে। এতবড় আসন একজন প্রতিনিধি দ্বারা সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা চাই পূর্বের মতো দুটো আসন করা হোক।

সিলেট-১ অ্যাডভোকেট তাজউদ্দীন বলেন, সিটি করপোরেশনের ২৫, ২৬, ২৭ ওয়ার্ড সিলেট-১ আসন থেকে কেটে সিলেট-৩ আসনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এ ওয়ার্ডগুলোকে সিলেট-১ আসনে অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি জানাই।