আম্ফানে চুয়াডাঙ্গাসহ বহু এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি : ঝিনাইদহে একজনসহ মৃত্যু কমপক্ষে ১০

স্টাফ রিপোর্টার: ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শেষখবর পাওয়া পর্যন্ত ১০ জন মারা যাওয়ার তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমাজের্ন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। এদের মধ্যে ঝিনাইদহের একজন। যশোরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বিদ্য্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গায় প্রচুর গাছ ভেঙে পড়লেও বিদ্যুত বিভাগের দ্রুত পদক্ষেপে আংশিক বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৫৩ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় দেশের উপকূলীয় অনেক এলাকাতেই মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ হয়ে গেছে।

ঝড়ে নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে তাদের মধ্যে পটুয়াখালীর কলপাড়ায় সৈয়দ শাহ আলম (৫৪) নামে এক স্বেচ্ছাসেবী নৌকাডুবে মারা যান। গাছচাপা পড়ে মারা গেছে একই জেলার গলাচিপার পানপট্টি এলাকার রাশেদ (৫) ও ভোলার চরফ্যাশনের মো.সিদ্দিক ফকির (৭২)। ট্রলারডুবে মারা গেছেন ভোলার বোরহানউদ্দিনের রফিকুল ইসলাম (৩৫)। এ ছাড়া দেয়াল চাপা পড়ে মারা গেছেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার শাহজাহান মোল্লা (৫৫)। আর চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে সালাউদ্দীন (১৬) নামে একজন মারা গেছেন।এ ছাড়া যশোরের চৌগাছায় দুজন, সাতক্ষীরায় একজন ও ঝিনাইদহে একজন মারা গেছেন। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির হিসেব পেতে একটু সময় লাগবে।

গতকাল বুধবার সারা রাত তাণ্ডব চালানোর পর ঘূর্ণিঝড় আম্পান এখন একেবারেই দুর্বল হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পান স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আরও উত্তর–পূর্ব দিকে সরে গেছে। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল রাত আনুমানিক পৌনে ১১টার দিকে শুরু হয় ঝড়। ভিতিকর শব্দে ঝড় বৃষ্টির সাথে সাথে ছিলো বজ্রপাত। শেষরাত পর্যন্ত চলে এ তাণ্ডব। প্রায় ১১ বছর আগের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত সারতে না সারতেই সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা। বুধবার সারা রাতব্যাপী প্রচণ্ড ঝড়ে খুলনা,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও তীব্র জোয়ারের পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমি ও মাছের ঘের। সড়কে বড় বড় ভাঙ্গা গাছ পড়ে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। আম্ফানের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে গোটা সুন্দরবন উপকূল। বুধবার সন্ধ্যায় প্রবল গতিতে সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন আম্ফান। সারা রাত ধরে চলে এর তাণ্ডব। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার ক্ষত সারতে না সারতেই আবারো লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সুন্দরবন উপকূলের খুলনার কয়রা, দাকোপ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, বাগেরহাটের মোংলা ও শরণখোলা উপজেলাসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। খুলনা মহানগরীসহ এসব এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তীব্র ঝড়ের মধ্যে লাখ লাখ মানুষের সারা রাত কাটে কাটে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঝড় শুরু হওয়ার পর থেকে বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছেন তারা। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না ওই উপজেলায়। এছাড়া বরগুনার উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্কও ।খুলনা,বাগেরহাট,সাতক্ষীরা,পটুয়াখালি,পিরোজপুর,লক্ষীপুর,যশোর, বরগুনা এবং নোয়াখালির বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৫০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছেন না। এছাড়া গতকাল বুধবার সকাল থেকে উপকূলীয় অনেকে এলাকাই বিদ্যুৎ সেবার আওতার বাইরে আছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে মেরামত কাজ শুরু করেছি। তবে সাতক্ষীরা ও খুলনায় খারাপ আবহাওয়ার কারণে মেরামত কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এদিকে বরিশাল শহরসহ বিভাগটির প্রায় ৩ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী প্রকৌশলী অমূল্য কুমার সরকার।

 

Comments (0)
Add Comment