চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের ৬ সদস্যসহ  নতুন শনাক্ত ১০ : মেহেরপুরে ৩

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার ৬ পুলিশসহ নতুন করে ১০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে এ রিপোর্ট চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে আসে। পুলিশের আক্রান্ত সদস্যদের সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। দর্শনা থানায় কর্মরত ৩২ জন পুলিশ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। দর্শনা থানার নতুন ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কামরুজ্জামানকে। এছাড়াও অন্য দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশের ১৭ জন নতুন সদস্যকে যুক্ত করা হয়েছে দর্শনা থানায়। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ পর্যন্ত ১২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল আলম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেনসহ গতকাল রোববার মেহেরপুর জেলায় নতুন করে তিন জনের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ জন। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে নতুন করে ২৪ ঘন্টায় ১ জন করোনায় আক্রান্তÍ হয়েছে। এ পর্ষন্ত জেলায় মোট ৫৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হোম কোয়ারেন্টন আছেন ১০৬ জন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান বলেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে ৫৮ জনের রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে ১০ জনের রিপোর্ট করোনা পজেটিভ আসে। দর্শনা থানার ওসি তদন্তসহ ৬ পুলিশ সদস্য, থানার একজন বাবুর্চি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২ জন এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১ জন নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। পুন:পরীক্ষার রিপোর্ট দুইজনের পরপর দুইবার নেগেটিভ এসেছে। পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, দর্শনা থানায় ওসিসহ ১৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তারা হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রয়েছেন। থানার অন্য সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। নতুন ওসিসহ ১৮ স্টাফকে সংযুক্ত করা হয়েছে। সবাই সুস্থ আছেন।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় এ পর্যন্ত ১২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৭৭ জন। একজন মারা গেছেন ও একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, করোনা প্রতিরোধে মাঠে নেমে দর্শনা থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমানসহ আরো ৬ জন পুলিশ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন থানার কাজের বুয়াও। এর আগে ওসি মাহব্বুর রহমান কাজল করোনায় আক্রান্ত হন। তারপর আরো ৭ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছিলো। এ নিয়ে দর্শনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ জন। এর মধ্যে ১৪ জনই দর্শনা থানা পুলিশ, ১ জন থানার কাজের বুয়া ও বাকী দুজন থানা চত্বরের বাইরে। শুধু দর্শনাতেই নয় যতোই দিন যাচ্ছে ততই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গোটা জেলায় বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত ২৬ মে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহব্বুর রহমান কাজল। একই দিন করোনা টেস্টে পজেটিভ রিপোর্ট আসে দর্শনা মোহাম্মদপুরের রুবেলের। দুদিন পর দর্শনা থানার কনস্টেবল নারায়নের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়। ওসিসহ ২ জন করোনা আক্রান্তের পর দর্শনা থানার প্রায় অর্ধশত সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এদের মধ্যে গত শুক্রবার ৬ পুলিশ সদস্যের করোনা ভাইরাস পজেটিভ রিপোর্ট আসে। তাদের প্রত্যেককেই চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। এদিকে গতকাল রোববার আরও ৬ পুলিশ সদস্যসহ থানার কাজের বুয়ার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। ৬ পুলিশের মধ্যে রয়েছেন দর্শনা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শেখ মাহবুবুর রহমান, এএসআই মারুফ হাসান, সাইদুর রহমান, মহিউদ্দিন, কনস্টেবল ফরহাদ ও মিজান। এ ছাড়া থানার কাজের ছেলে সুমন ও কাজের বুয়া পারুলেরও করোনা টেস্টের জন্য নমুনা পাঠানো হয়। তবে সুমনের নেগেটিভ রিপোর্ট এলেও পজেটিভ রিপোট এসেছে পারুলের। দিন দিন দর্শনায় অতিমাত্রায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে বাড়েনি সচেতনতা, চলাচলে নেই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। হরহামেশায় মাস্কবিহীন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে অনেককেই। হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, বাসস্ট্যান্ডে জনমানবের উপস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কঠোর কোনো ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না প্রশাসনের।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল আলম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেনসহ গতকাল রোববার মেহেরপুর জেলায় নতুন করে তিনজনের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে মেহেরপুর সিভিল সার্জন জানিয়েছেন এনিয়ে আজ পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ জন। সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া তিনজনের অপরজন মুজিবনগর উপজেলার নাজিরাকোনা গ্রামের ২৬ বছর বয়সী এক নারী। তিনি স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্ত ওই নারী শারীরিক সমস্যার কারণে নমুনা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে এসেছিলেন। অপরদিকে গাংনী উপজেলায় গেলো এপ্রিল মাস থেকে নমুনা সংগ্রহ, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসাসহ নানা কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন ডা. এম রিয়াজুল আলম। করোনাভাইরাস আক্রান্ত কারো সংস্পর্শ থেকে তিনি সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা স্বাস্থ্য বিভাগের।
এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন ত্রাণ বিতরণের বিভিন্ন কাজ করছেন লকডাউনের শুরু থেকেই। ফলে তিনিও নানান মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। তবে কার সংস্পর্শে তিনি সংক্রমিত হয়েছেন তা ধারণা নেই জাকির হোসেনের।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল আলম বলেন, আমি নিজ কোয়ার্টারে হোম আইসোলেশনে আছি। এখান থেকেই হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করবো। মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন বলেন, আক্রান্ত শনাক্ত তিনজনের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গতকাল তিনজন নতুন সংক্রমিত শনাক্তের মধ্য দিয়ে মেহেরপুর জেলায় মোট আক্রান্ত ৩০ জন। এর মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং সুস্থ হয়েছেন ছয় জন। বাকিরা বাড়িতে রুম আইসোলেশনে সুস্থ আছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। গাংনী উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৪ জন।
কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে নতুন করে ২৪ ঘণ্টায় ১ জন করোনায় আক্রান্তÍ হয়েছে। এ পর্ষন্ত জেলায় মোট ৫৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১০৬ জন। রোববার সকালে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান, সকালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিপোর্ট এসেছে একটি পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলায় একজনের রিপোর্টে করোনা পজেটিভ এসেছে। তার নাম আব্দুর রাজ্জাক। আক্রান্তদের হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

Comments (0)
Add Comment