চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে করোনার প্রকোপ

চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাস শনাক্তের ৯৩তম দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৬ জনে

একই পরিবারের চারজনসহ চুয়াডাঙ্গায় ৭ মেহেরপুরে দুজন আক্রান্ত
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় একই পরিবারের চারজনসহ নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই শিশুসন্তান এবং দামুড়হুদার তিন পুলিশ সদস্য। চুয়াডাঙ্গায় করোনা শনাক্তের ৯৩তম দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ১৭৬ জনে। মেহেরপুরে ৬৮ বছর বয়সী বৃদ্ধসহ দুজন আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে একজন আবাসিক হোটেল মালিক। এর আগে ওই হোটেলের ম্যানেজার করোনা আক্রান্ত হন। মেহেরপুর জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ জন। ঝিনাইদহের মহেশপুরে নতুন করে স্বাস্থ্যকর্মীসহ দুজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গায় দুই শিশুসহ নতুন করে আরও ৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন স্বামী-স্ত্রী ও শিশুসন্তানসহ একই পরিবারের চারজন এবং উপপরিদর্শকসহ দামুড়হুদার তিন পুলিশ সদস্য। গতকাল শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার ৩৯টি রিপোর্টের মধ্যে ৭ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৬ জনে। গত ১৯ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। জেলায় করোনা শনাক্তের ৯৩তম দিন আজ। এদিকে, করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য গতকাল শুক্রবার নতুন নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে ২০টি।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবসূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার ৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। তার মধ্যে ৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ৭ জনের মধ্যে রয়েছেন স্বামী-স্ত্রী ও শিশুসন্তানসহ একই পরিবারের চারজন। এছাড়া আরও একজনের পুনঃপরীক্ষায় রেজাল্ট পজেটিভ পাওয়া গেছে।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার জাফরপুর গ্রামের একই পরিবারের চারজন। ওই পরিবারে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই শিশু সন্তানের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ পরিবারের পুরুষ ঢাকায় একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তিনি বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়াও আক্রান্ত হয়েছেন দামুড়হুদা মডেল থানার দুই কনস্টেবল এবং দুলালনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ। আক্রান্ত ৭ জনের বয়স ২ থেকে ৫২ বছরের মধ্যে। আক্রান্ত তিন পুলিশ সদস্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া একই পরিবারের চারজনকেই জাফরপুর গ্রামে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় এ পর্যন্ত ২৮ জন পুলিশ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৪ জন।
চুয়াডাঙ্গায় এ পর্যন্ত মোট ১৭৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮৯ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮৭ জন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৬২ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪১ জন। আলমডাঙ্গা উপজেলায় আক্রান্ত ৪৫ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৬ জন। দামুড়হুদা উপজেলায় আক্রান্ত ৫৬ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৮ জন। জীবননগর উপজেরায় আক্রান্ত ১৩ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪ জন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একজন মৃত ব্যক্তির নমুনায় করোনা পজেটিভ আসে।
গত ১৯ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ইতালি ফেরত আলমডাঙ্গার এক যুবক প্রথম করোনায় আক্রান্ত হন। করোনা শনাক্তের ৯৩তম দিনে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৬ জনে। এ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এক হাজার ৯শ’ জনের। ইতোমধ্যে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে এক হাজার ৭৯৭ জনের।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে আবাসিক হোটেলের ম্যানেজারের পর এবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ওই হোটেলের মালিক। একই দিনে শহরের নতুনপাড়ায় ৬৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ৯টা পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ওই দুজন কোভিড-১৯ পজেটিভ বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। নতুন আক্রান্ত দুজনসহ জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৮ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। মৃত্যুর পর তাদের নমুনা পরীক্ষা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগসূত্রে জানা গেছে, গেলো ১৬ জুন মেহেরপুর শহরের একটি আবাসিক হোটেলের ম্যানেজারের নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ চিহ্নিত হয়। ৩৪ বছর বয়সী হোটেল ম্যানেজার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ১৪ জুন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হলে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তিনি কোভিড-১৯ পজেটিভ হলে তাকে আইসোলেশনে রাখা হয় এবং আবাসিক হোটেল ও বাড়ি লকডাউন করে প্রশাসন। পাশাপাশি তার সংস্পর্শে আসা পরিবারের সদস্য ও হোটেলের লোকজনের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়। গেলো ২৪ ঘণ্টায় মেহেরপুর জেলার মোট ২০টি নমুনা পরীক্ষায় হোটেল মালিক ও নতুনপাড়ার এক বৃদ্ধ সংক্রমিত চিহ্নিত হয়েছেন। ওই বৃদ্ধ অসুস্থ অবস্থায় ১৮ জুন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। করোনাভাইরাস উপসর্গ থাকায় তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে তিনি মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। মেহেরপুরের ওই আবাসিক হোটেলে বিভিন্ন জেলার মানুষ রাত্রীযাপন করেন। সেখান থেকে হোটেল মালিক ও ম্যানেজার আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা স্বাস্থ্য বিভাগের। তবে নতুনপাড়ার ওই বৃদ্ধ কার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। তার বাড়ি লকডাউনসহ সংস্পর্শে আসা লোকজনের নমুনা গ্রহণের প্রক্রিয়া করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের মহেশপুরে নতুন করে স্বাস্থ্যকর্মীসহ দুজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ জনে। নতুন করে আক্রান্ত একজনের বাড়ি উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউপির ভৈরবা বিদ্যুতপাড়ায়, অপরজন এসবিকে ইউপির খালিশপুর বাসস্টান্ডপাড়ায়। তিনি স্বাস্থ্যকর্মী। তারা দুজনেই এখন নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসাধীন আছেন। মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুমানার বেগম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, গত ১৭ জুন তারা ঢাকা থেকে শরীরে করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে আসে। তাদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হলে সেখানে পরীক্ষার পর শুক্রবার সকালে জানা যায় তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। উল্লেখ্য ১৭ জুন ঝিনাইদহ জেলায় ১৫ জনের করোনা ভাইরাস পজেটিভ রিপোর্ট আসে। মহেশপুরে ৮জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ৪ জন সুস্থ হয়েছেন এবং ৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুমানার বেগম জানান, ইতোমধ্যে একজনের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে এবং অপরজনের বাড়ি লকডাউন করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ায় নতুন করে আরও ২১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজন ব্যাংক কর্মকর্তা রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩২৮ জনে। গতকাল শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ১২৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ আসে ২১ জনের। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ জন, কুমারখালী উপজেলায় একজন, ভেড়ামারা উপজেলায় ১০ জন, মিরপুর উপজেলায় দুজন, দৌলতপুর উপজেলায় দুজন ও খোকসা একজন রোগী শনাক্ত হয়। আক্রান্তের মধ্যে সাতজন ব্যাংক কর্মকর্তা রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩২৮ জনে। ইতোমধ্যে দুজন আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করেছে। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭৭ জন।

Comments (0)
Add Comment