বেতন ফি’র চাপে অভিভাবকরা : শিগগিরই আসছে সরকারি নির্দেশনা

শিক্ষার্থীদের শিখনফল মূল্যায়নে অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণের জন্য কোনো ফি নেয়া যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা ভাইরাসের কারণে সারাদেশে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেতন ফি আদায়ে অভিভাবকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ছেন অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা। এ বছর বার্ষিক পরীক্ষা না হওয়ার কারণে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে এখন শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করছে। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ অ্যাসাইনমেন্টকে ইস্যু করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করতে চাইছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া করোনা মহামারীর মধ্যেও অনেক প্রতিষ্ঠান ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আগাম বেতন ফি আদায় করছে।
সংশ্নিষ্টসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বেতন ফি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবক-দুইপক্ষকেই সহনশীল হতে হবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, অভিভাবকরা ফি না দিলে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কীভাবে হবে। তবে একথাও সত্য যে করোনার কারণে বহু অভিভাবকের আয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মানবিক হতে হবে। এ বিষয়ে শিগগিরই একটি নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানান তিনি। বৈশ্বিক এই মহামারীকালে কর্মহীন হয়ে পড়েছে সারাদেশের নিম্ন আয়ের অসংখ্য মানুষ। চাকরি হারিয়েছেন মধ্যবিত্তের অনেকে। গত ১৮ মার্চ থেকে সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ সংকটকালে বেতন-ফি আদায়ে চাপ প্রয়োগ না করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি জমা দিতে প্রতিনিয়তই অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ফোন করে তা পরিশোধের জন্য চাপও দিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। বকেয়া রাখলে পরবর্তী সময়ে জরিমানাও গুনতে হবে বলে সতর্ক করা হচ্ছে।
অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ ফি নেয়া যাবে না: ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিখনফল মূল্যায়নে অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণের জন্য কোনো ফি আদায় করা যাবে না বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, শিক্ষার্থীদের শিখনফল মূল্যায়ন করতে যে অ্যাসাইমেন্ট নেয়া হচ্ছে, সেজন্য তাদের কাছ থেকে কোনো ফি নেয়া যাবে না।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়েই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণিতে তোলা হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণের জন্য ৩০ কর্মদিবসে শেষ করা যায় এমন একটি সিলেবাস প্রণয়ন করেছে এনসিটিবি। সেই সিলেবাসের আলোকে শিক্ষার্থীদের প্রতি সপ্তাহে তিনটি করে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হচ্ছে; যার উত্তর শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক অনুসরণ করে লিখতে বলা হয়েছে। এ অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী ক্লাসে তা পূরণের চেষ্টা করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আগেই জানিয়েছেন।
নির্দেশনা আসছে, মওকুফ হচ্ছে অতিরিক্ত ফি: শিক্ষার্থীদের মাসিক টিউশন ফি নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব ঘোচাতে চলতি সপ্তাহেই সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সুস্পষ্টভাবে দুটি নির্দেশনা থাকবে বলে জানা গেছে। প্রথমত. কোনো অতিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না। দ্বিতীয়ত. অসচ্ছল, দরিদ্র ও করোনার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত- এমন অভিভাবকদের ফি মওকুফ অথবা আংশিকভাবে ছাড় দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফির বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই এ নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে বলে মাউশি থেকে জানা গেছে।
মাউশি সূত্র জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে টিউশন ফি আদায়ের একটি গাইডলাইন তৈরি করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের সঙ্গে বার্ষিক মিলাদ মাহফিল ফি, বিদ্যুত, পানির বিল, ল্যাব ফি, খেলাধুলা ফি, বার্ষিক ক্রীড়া, বার্ষিক শিক্ষা সফরসহ বিভিন্ন ধরনের ফি বাতিল করা হবে। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসব টাকা আদায়ের কোনো প্রয়োজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেই। নির্দেশনায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের স্বার্থে, শুধু টিউশন ফি আদায় করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হবে। এজন্য ঢাকাসহ দেশের জেলা শহরগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের স্কুল-কলেজ থেকে এরই মধ্যে তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেদে নানা ধরনের অতিরিক্ত ফি চিহ্নিত করে তা বাতিলের জন্যও এ নির্দেশনা জারি করা হবে। মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে টিউশন ফি-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হবে। তার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ বেতন-ভাতা আদায় করবে। তিনি বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। কোন প্রতিষ্ঠানে কত টাকা আদায় করা হয় তা চিহ্নিত করা হয়েছে। তার আলোকে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক টিউশন ফির সঙ্গে অতিরিক্ত ফি সব বাদ দিয়ে আদায় করতে বলা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত টিউশন ফি আদায় করেছে সেসব প্রতিষ্ঠানের জন্য কী ধরনের নির্দেশনা থাকবে? জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, নির্দেশনা জারির আগে যে সব প্রতিষ্ঠান অর্থ আদায় করবে, তারা পরবর্তী মাসের টিউশন ফির সঙ্গে অর্থ সমন্বয় করতে বলা হবে। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা ও প্রতিষ্ঠান চালাতে অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। তাই অভিভাবকদের যারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হননি, তারা সম্পূর্ণ টিউশন ফি পরিশোধ করবেন বলে মহাপরিচালক আশা প্রকাশ করেন।

Comments (0)
Add Comment