হত্যার পর মায়ের বস্তাবন্দি লাশ পানিতে ফেলে থানায় অপহরণের জিডি করে ছেলে 

কুষ্টিয়ার মিরপুরে মাকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে পানিতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিখোঁজের ৩১ দিন পর ওই মায়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে কুষ্টিয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় নিহত ওই নারীর ভাই ভেড়ামারা উপজেলার ক্ষেমিড়দিয়াড় গ্রামের তুরাব আলী (৬৭) বাদী হয়ে বুধবার মিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন, যার মামলা নং-২১। ওই মামলায় নিহতের ছেলে মুন্না বাবু, তার বন্ধু রাব্বী আলামীন ও দেবর আব্দুল কাদের বিশ্বাসকে (৫০) আসামি করা হয়েছে। ঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের দক্ষিণকাটদহ এলাকার একটি পুকুর থেকে ওই মায়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মা মমতাজ বেগমকে (৫৪) অপহরণ করা হয়েছে, এমন তথ্য উল্লেখ করে গত ২৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন ছেলে মুন্না বাবু (৩২)। এ ঘটনার কয়েক দিন পরই মমতাজ বেগমের মেয়েজামাইয়ের কাছে একটি মুঠোফোন থেকে কল আসে। বলা হয়, পাঁচ লাখ টাকা দিলে মমতাজের সন্ধান দেবেন তিনি। ওই মুঠোফোন নম্বর ধরেই অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। পরে জানা যায় নিজের মাকে হত্যার পর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতেই অপহরণের জিডি করেছিলেন মুন্না।
মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের দক্ষিণ কাটদহ গ্রামের বাসিন্দা মমতাজ বেগম নিখোঁজের তদন্ত শেষে আজ বুধবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানায় পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মাকে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন মুন্না ও তাঁর দুই সহযোগী। মমতাজ বেগমের সন্ধান দিতে টাকা দাবি করে যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি মুন্নার সহযোগীদের একজন। তাঁর নাম রাব্বি হোসেন (২৭)। অপর সহযোগী মুন্নার চাচা আবদুল কাদের (৫২)। তাঁদের তিনজনকেই আটক করেছে পুলিশ। মায়ের সম্পত্তির লোভেই হত্যার ঘটনা ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত। তদন্তে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, মমতাজ বেগমের স্বামী ফজল বিশ্বাস অনেক আগেই মারা যান। তাঁদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। ছেলে মুন্না জুয়া খেলতেন এবং মাদকাসক্ত। এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই তাঁর ঝগড়া হতো। সম্পদ ও টাকা চাওয়া নিয়ে মায়ের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় হত্যার পরিকল্পনা করেন মুন্না। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেন চাচা ও এক বন্ধু।
পুলিশ জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২১ জানুয়ারি দুপুরে গলায় রশি পেঁচিয়ে মমতাজ বেগমকে হত্যা করেন তাঁরা। এরপর লাশ বস্তাবন্দী করে ঘরের ভেতর খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন। পাড়া-প্রতিবেশীদের মুন্না জানান, তাঁর মা নিখোঁজ হয়েছেন। ওই দিন রাতে বাড়ির পাশের পুকুরে লাশ ডুবিয়ে রাখেন। তিন দিন পর ২৫ জানুয়ারি মিরপুর থানায় ‘অপহরণ’ হওয়ার সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত জানান, এ ঘটনার কয়েক দিন পর মমতাজ বেগমের বড় মেয়েজামাই সেকেন্দার আলীর সন্ধান দেওয়ার কথা বলে কল করা হয়। পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় শনাক্ত করে নম্বরটি মুন্নার বন্ধু রাব্বি ব্যবহার করেন। গতকাল মঙ্গলবার গোয়েন্দা পুলিশ রাব্বিকে আটক করে। এরপর মুন্না ও তাঁর চাচাকে আটক করা হয়। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, লাশটি পুকুরে রাখা আছে। সন্ধ্যায় সেই পুকুর থেকে গলিত লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) ফরহাদ হোসেন বলেন, আজ বুধবার সকালে মিরপুর থানায় এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়। এই তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নেয় পুলিশ।

Comments (0)
Add Comment