চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক সপ্তাহের বিশেষ লকডাউন চুয়াডাঙ্গায় বাড়ছে রোগীর সংখ্যা 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন ভারতে আটকে পড়া আরও ৬৫ জন বাংলাদেশি নারী-পুরুষ। এ নিয়ে গত ৮ দিনে দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে মোট ৬১২ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন। এদের মধ্যে মোট ১০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। ভারতের কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে অনাপত্তি পত্র (এনওসি) নিয়ে গতকাল সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬৫ জন বাংলাদেশি দর্শনা চেকপোস্টে আসেন। এখানে প্রবেশের পর স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেকের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে এক ব্যক্তি করোনা শনাক্ত হয়েছেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ায়। পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশের অভিবাসন শাখা (ইমিগ্রেশন) ও শুল্ক বিভাগের (কাস্টমস) আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেখান থেকে তাদের নির্ধারিত পরিবহনযোগে (মাইক্রোবাস) কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল নেয়া হয়েছে। সেখানে তারা ১৪ দিনের বাধ্যতামূলত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।
এদিকে, সীমান্ত জেলা চুয়াডাঙ্গায় করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ভারত থেকে যাত্রীরা এসে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকায় জেলাবাসীর মনেও দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সম্ভাব্য সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, সীমান্তবর্তী সাত জেলা যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিলেটে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার বাড়ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
অপরদিকে, করোনার সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত ১২টা থেকে শুরু করে ৩১ মে মধ্যরাত পর্যন্ত এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
দর্শনা ইমিগ্রেশন সূত্র জানিয়েছে, ভারতের কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে অনাপত্তি পত্র (এনওসি) নিয়ে গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৫ জন নারী-পুরুষ দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন। এ নিয়ে গত ৮ দিনে দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে মোট ৬১২ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন।
দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক আব্দুল আলিম জানান, সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৫ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে এক ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। তাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীন জানান, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৫ জন দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে ২৭ জনকে কুষ্টিয়া, ১৬ জনকে ঝিনাইদহ, ১৮ জনকে মেহেরপুর ও ৪ জনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল নেয়া হয়েছে। সেখানে তারা ১৪ দিনের বাধ্যতামূলত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।
তিনি আরও জানান, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১০ জন ভারত ফেরত ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হলো। তাদের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান জানান, ভারত ফেরত করোনায় আক্রান্ত ১০ জনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডের রেড জোনে ভর্তি রেখে নিয়মিত নিবীড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাদের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য নমুনা নিয়ে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনও এসে পৌঁছায়নি।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ভারত থেকে যাত্রীরা এসে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকায় জেলাবাসীর মনেও দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সম্ভাব্য সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ১৭ মে ভারত থেকে চুয়াডাঙ্গায় দর্শনায় বাংলাদেশিদের ফিরে আসা শুরু হয়। গত রোববার নাগাদ মোট এসেছেন ৪৫৯ জন। এ সময়ে ভারত থেকে আসা যাত্রীসহ জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন। আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক বেড়েছে। ভারত থেকে আগতদের মধ্যে আটজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে এর মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে। ওই নমুনার ফলাফল এখনো জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসে পৌঁছেনি।
জেলার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ ভারত থেকে আগত যাত্রীদের নির্ধারিত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখছে। এগুলো হলো কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, যুব উন্নয়ন অধিদফতরসহ কয়েকটি স্থান।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, নিকটস্থ পিসিআর ল্যাব হিসেবে কুষ্টিয়াতে করোনা শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ হয় চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার রোগীদের। গত ১৬ মে থেকে অদ্যাবধি ভারত থেকে আগত ১১৭ জন রোগীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে এই ভাইরাসটি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কি না তা নির্ণয় করতে নমুনাগুলো ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। তবে ফলাফল এখনো হাতে পায়নি।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন জানান, এ ৭ জেলায় সংক্রমণ কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী এই জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেশি হওয়ার সঙ্গে ভারতে যাতায়াতের একটি সম্পর্ক থাকতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলা থেকে জরুরি রোগী পার্শ্ববর্তী বড় জেলায় বা বিভাগীয় শহরে দ্রুত আনার প্রস্তুতি নিতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ সাংবাদিকদের জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাম্প্রতিক করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাছাড়া সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে আটকে পরা বাংলাদেশিরা প্রবেশ করছেন। তাদের মাধ্যমে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা ও করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশক্রমে এ জেলায় ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হলো।
লকডাউনের এ সাতদিন অপ্রয়োজনে কেউ বাসার বাইরে যেতে পারবে না। জেলায় সকল প্রকার যানবহন বন্ধ থাকবে তবে রোগী পরিবহন বা অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ও সেবাদানের জন্য যানবহন চলবে। এসময় রাজশাহী/নওগাঁ থেকে কোনো যানবাহন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ কিংবা বেরুতে পারবে না। কাঁচাবাজার, মুদিখানা, ফার্মেসী ছাড়া সব ধরনের দোকানপাট ও সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকবে।

Comments (0)
Add Comment