চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ৪দিন যাবত কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই নেই : জানেন না সিভিল সার্জন

এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ১৪৮ রোগী ভর্তি : বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনছেন রোগীরা

আফজালুল হক: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চারদিন যাবত কলেরা আইভি ফ্লুইড স্যালাইনের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাইরে থেকে রোগীরা স্যালাইন কিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে চারদিন যাবত হাসপাতালে কলেরা স্যালাইনের সঙ্কট থাকলেও জানেন না খোদ জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিভিল সার্জন নিজেই। এক সপ্তাহে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শিশুসহ ১৪৮জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় দেড় শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডসূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ১৪৮ রোগী ভর্তি হয়েছেন গতকাল বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত নতুন ১৯ রোগী আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। ক’দিন আগে ডায়রিয়া রোগীর চাপ থাকলেও বর্তমানে কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সেবিকারা। তবে অন্যান্য সব কিছু সাপ্লাই থাকলেও গত চারদিন যাবত কলেরা আইভি ফ্লুইড স্যালাইন সাপ্লাই নেই। রোগীরা বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনছেন স্যালাইন।

এদিকে চারদিন যাবত কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই না থাকায় রোগী ও স্বজনদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের রাসেল নামে একজন বলেন, আমার চাচা আজ ৩দিন যাবত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টা কলেরা স্যালাইন দিতে হচ্ছে। সাপ্লাই না থাকার কারণে বাইরের ফার্মেসি থেকে কলেরা স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। একেক সময় একেক মূল্য নিচ্ছেন ফার্মেসি থেকে। হাসপাতালে সাপ্লাই না থাকায় ইচ্ছেমত কলেরা স্যালাইনের মূল্য নিচ্ছেন।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে দেড় বছরের শিশু তাসনিম তিশা। শিশুটির মা জানান, গত দুদিন থেকে পাতলা পায়খানা আর বমি হচ্ছিলো মেয়ের। গত পরশু সকালে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করে। হাসপাতাল থেকে খাওয়া স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ দিলেও কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই নেই জানিয়ে বাইরে থেকে কিনে আসতে বলে। দু একদিন সাপ্লাই না থাকতে পারে। টানা চারদিন সাপ্লাই নেই জেলা একমাত্র সদর হাসপাতালে। বিষয়টি দুঃখজনক।

আম্বিয়া খাতুন নামে একজন নারী বলেন, তিনদিন আগে তার আড়াই বছরের ছেলের হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়। স্যালাইন খাওয়ানোর পরও কোনো কাজে আসেনি। অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ না থাকলেও বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। প্রথম দিন একটা কলেরা স্যালাইন পেলেও আর দেয়নি। বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও’র) এএসএম ফাতেহ আকরামের ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিক ফোন করা হলেও নম্বরটি ব্যস্ত থাকার কারণে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান বলেন, হাসপাতালের কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই নেই। চাহিদা পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই কলেরা স্যালাইন চলে আসবে।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. মো. সাজ্জাৎ হাসান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, কলেরা স্যালাইনের সাপ্লাইয়ের বিষয়টি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএম) জানবেন। এই তথ্যটা আমাকে জানানো হয়নি। আপনি (প্রতিবেদক) বললেন, তাই জানলাম। যেটা জানি না সেই ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছি না বলে জানান এই কর্মকর্তা।

 

Comments (0)
Add Comment