অমীমাংসিত বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি প্রয়োজন

সম্প্রতিন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ এ বৈঠকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের মাধ্যমে দীর্ঘদিন শীতল হয়ে থাকা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অনেকটাই উষ্ণ হয়ে এগিয়ে গেছে। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি ছিােল এক্ষেত্রে আরেকটি মাইলস্টোন। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের যেসব বিষয় দীর্ঘদিন পরও অমীমাংসিত রয়ে গেছে, সেগুলোর ওপর আলোকপাত করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এই তিন অমীমাংসিত বিষয় হলো: একাত্তরে পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদের বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান ও ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বিদেশি সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই তিন চাওয়া যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত। একাত্তরের গণহত্যার জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ করলেও এখন পর্যন্ত পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া হয়নি। আমরা আশা করব, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন এবং পাকিস্তান সরকার অবিলম্বে বাংলাদেশের এই দাবির প্রতি সম্মান দেখাবে। পাকিস্তানের কাছে আমাদের পাওনা টাকার পরিমাণও অনেক। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল হিসাবে স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে যেসব সম্পদের ওপর আমাদের ভাগ ছিলো এবং ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বৈদেশিক সাহায্য হিসাবে যে অর্থ পাওয়া গিয়েছিলো, সেসব সম্পদ ও অর্থ নিশ্চয়ই আমরা দাবি করতে পারি এবং সেটাই করা হয়েছে। আমরা চাইবো, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে এ পাওনা অর্থ ফেরত দেবে দেশটি। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর অনেক পাকিস্তানি আটকা পড়েছিলেন এবং তাদের সিংহভাগই দেশে ফেরত যেতে পারেননি। আটকে পড়া এসব পাকিস্তানিকে স্বদেশে প্রত্যাবাসন করাটাও পাকিস্তান সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিষয়টি মানবিকও বটে। আমরা এবং বর্তমানের পাকিস্তান দীর্ঘ ২৩ বছর একই রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। অন্যায়-শোষণের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা আলাদা রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। এরপর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বেশির ভাগ সময়ই কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো ছিলো না। অথচ দুটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকাটা জরুরি। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর নতুন প্রেক্ষাপটে এ দুই দেশের মধ্যে কার্যকর, ফলপ্রসূ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক-সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা গেলে উপকৃত হবে দুই দেশই। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপরের যে তিনটি বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে, পাকিস্তান সেগুলোর নিষ্পত্তি করলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে, সন্দেহ নেই।