অ্যাড. আলমগীর হোসেনের মৃত্যুতে আমরাও শোকাহত

চুয়াডাঙ্গার এরকম একজন মানুষের মৃত্যু হবে ভাবতেই পারিনি। করোনা আর কতোজনকে এভাবে কেড়ে নেবে? যার মধ্যে সব সময়ই ছিলো ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই’ স্লোগান। কোথাও অন্যায় হচ্ছে শুনে নীরব না থেকে ছুটে গেছেন সশরীরে। প্রতিবাদ করেছেন। নিপীড়নের শিকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আইনগত সহায়তাই শুধু দেননি, অসংখ্য দাম্পত্যে ফিরিয়েছেন শান্তি। কতোটা গুণ না থাকলে একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শের মানুষ হলেও সর্বস্তরের মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু হতে পারেন। অ্যাড. আলমগীর হোসেনের মৃত্যুতে সত্যিই এলাকাবাসীর বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। যে ক্ষতি এ ক্ষতি পূরণ হবে কীভাবে? মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো ছাড়া সান্ত¦না দেয়ার যে আর কিছু নেই। তবুও চরম বাস্তবতাকে মেনে নিতেই হয়, হচ্ছে।

অ্যাড. আলমগীর হোসেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবার সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন। সভাপতি পদে তিনি তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বপালন করছিলেন। করোনা সংকটময় সময়ে তিনি জেলা বারের সকল সদস্যকে নিয়েই ভাবতেন। বলতেন, পূর্বে যারা দায়িত্বপালন করে গেছেন তারা জেলা বারের সদস্যদের কল্যাণকর অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়ে গেছেন। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সদস্যদের আরও বেশি সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনেক কিছুই ভাবছি। দেখি কি করা যায়! এইতো সেদিন একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলছিলেন, কিছু দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষের কারণে বিচার প্রার্থীদের অনেকেরই হয়রানি হতে হয়। এটাও শক্ত হাতে দূর করার চেষ্টা করছি আমরা। এসব উক্তিগুলোর মধ্যে চমৎকার দৃঢ়তা ছিলো তাঁর। ঘুরে ফিরে তিনিই সহকর্মীসহ অন্যদের করোনা থেকে সতর্ক থেকে সুস্থ থাকার কথা মনে করিয়ে দিতেন। হাটাহাটিসহ পরিমিত খাদ্যগ্রহণেরও গুরুত্বারোপ ছিলো প্রায় সবসময়। তিনিই যে, ওই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন, পক্ষকালেরও বেশি সময় ধরে তিনি করোনার সাথে যুদ্ধ করে হেরে যাবেন তা বিশ্বাস করাও কঠিন। চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চার সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বপালন করে আসছিলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এটা ছিলো তার শক্ত পাটাতন। করোনা ভাইরাসের প্রথম ডেউ যখন তখন তিনি খুবই সতর্ক ছিলেন, সকলকে সতর্কও করেছেন। দ্বিতীয় ডেউয়ে ওই করোনাতেই কেড়ে নিলো। তার অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করার মধ্যদিয়ে সহকর্মীরা নিশ্চয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। তিনি সচেতন হয়েও করোনা মুক্ত থাকতে পারেননি। কেনো? নিশ্চয় তিনি কারো বিপদে ছুটে গিয়ে ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন। যাদের জন্য তিনি বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তারা দায়িত্বশীল হলে নিশ্চয় তার মত গুণি মানুষকে এভাবে হরাতে হতো না। এ জন্যই দরকার সর্বস্তরের সকলের দায়িত্বশীল হওয়া।

করোনা ভাইরাস আর কতোজনকে কেড়ে নেবে কে জানে? বৈশি^ক মহামারি করোনা ভাইরাস খুবই ছোয়াচে। সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি মাস্ক পরতে হবে। শতভাগ স্বাস্থ্য বিধি না মানলেই সর্বনাশ। কোনোভাবেই ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র এই ভাইরাসকে খাটো করে দেখা উচিৎ হবে না। চুয়াডাঙ্গায় গত এক সপ্তাহের মধ্যেই করোনা ভাইরাস ও উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা অর্ধশতাধিকের বেশি। হাসপাতালে ও বাড়িতে অনেকেই অনিশ্চয়তার প্রহর গুণছেন। দেশজুড়ে চলছে কঠোর বিধি নিষেধাজ্ঞা। কেউ মানছেন, কেউ কেউ তা অবজ্ঞা করে চলছেন। এরকম হওয়া উচিৎ নয়। সকলকেই শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা ভাইরাসকে বিতাড়িত করতে হবে। অন্যথায় হারাতে হবে আরও অনেকের। যা কাম্য নয়। অ্যাড. আলমগীর হোসেনের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সকলের সুস্থতা কাম্য।

Comments (0)
Add Comment