উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি

সম্পাদকীয়

শিক্ষাঙ্গনে বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি থাকা না থাকা নিয়ে একটি বিতর্ক উঠে এসেছে। সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩৪ শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটকের পর আবার সামনে এসেছে বিষয়টি। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ অবশ্য আটকের পরদিনই সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, তাদের সন্তানরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তারা নিরপরাধ এবং সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলো। পুলিশ অবশ্য বলেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই আটক শিক্ষার্থীদের আদালত কর্তৃক জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। তদন্তও চলমান। এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী একযোগে শপথ গ্রহণ করে বলেছে, তারা যে কোনো ধরনের সাংগঠনিক রাজনীতির বিরুদ্ধে।

ক্যাম্পাসে সকল ধরনের সন্ত্রাস মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উৎখাতে তারা সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করবে। বিষয়টি যে ইতিবাচক সন্দেহ নেই। তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, ঐতিহাসিক ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনসহ শিক্ষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সর্বোপরি ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সশস্ত্র সংগ্রামেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনের ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, যা অস্বীকার করা যাবে না কোনোদিন। যে কোনো শিক্ষার্থী অনেক স্বপ্ন ও প্রভূত সম্ভাবনা নিয়ে ভর্তি হতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। যোগ্য ও মেধাবীদের প্রধান লক্ষ্য থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো-বুয়েট, ঢাবি, ঢামেক ও অন্যান্য। সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যয় অনেক কম। দুঃখজনক হলো, শুরুতেই কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী রীতিমতো হোঁচট খায় কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে, বিশেষ করে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। র‌্যাগিংয়ের নামে তাদের ওপর দিনের পর দিন চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন-নিপীড়ন। এর পাশাপাশি রয়েছে অপরাজনীতি, অপসংস্কৃতি ও মৌলবাদী তৎপরতা। রয়েছে গণরুমের নামে অকহতব্য আচার-আচরণ, গালিগালাজ, নির্যাতন-নিপীড়ন। একসময়ে প্রধানত ছাত্রদের হলগুলোতে র‌্যাগিং ও গণরুমের অপসংস্কৃতির চর্চা দেখা গেলেও সাম্প্রতিককালে দেখা যায়, ছাত্রীরাও কম যায় না কোনো অংশে। শিক্ষার্থীদের তুলনায় হলগুলোতে স্থান সংকুলানের সমস্যা শিক্ষার্থীদের একরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয় মেঝেতে। সেখানে লেখাপড়া ও শৌচাগারের দুরবস্থা সহজেই অনুমেয়। যখন-তখন এমন কি রাত-বিরাতে ডেকে পাঠানো হয় সিনিয়রদের হুকুম তামিল করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস থাকলেও দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। বাস্তবতা হলো, র‌্যাগিং ও গণরুমের অপসংস্কৃতির নামে একজন নবীন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন হোঁচট খায় শুরুতেই। তার উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ স্বপ্নে চির ধরে। পড়ালেখা হয় বাধাগ্রস্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক বারবার হুঁশিয়ার ও সাবধান বাণি উচ্চারণ করার পরও এসবের উৎপাত-উপদ্রব বন্ধ হয়নি। র‌্যাগিং ও গণরুমের অপসংস্কৃতি বন্ধে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আমরা আশা করবো, সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন অপরাজনীতি-অপসংস্কৃতি-মৌলবাদী তৎপরতা বন্ধের পাশাপাশি র‌্যাগিং ও গণরুমের অত্যাচার নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

Comments (0)
Add Comment