একজনের বোকামিতে অন্যের প্রাণহানি আর কতোদিন

কমল পানীয় ও পানীয় পানির প্লাস্টিকের বোতল তরলপদার্থ আনা-রাখাসহ নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। যদিও তা বহু ব্যবহারের উপযোগী নয়। পানীয় পানির বোতলে কীটনাশক, বিষ, এসিড, রেক্টিফাইড স্পিরিটসহ বিভিন্ন প্রকারের তরল রাখার কারণে প্রাণপ্রদীপ নিভে যাওয়ার খবর মাঝে মধ্যেই পত্রস্থ হয়। প্রতিকার মেলে না। সর্বশেষ গতপরশু চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার হাকিমপুরের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। কীটনাশক রাখা বোতল বাড়ির অদূরে ফেলে রাখার কারণে তা কুড়িয়ে নিয়ে খেলছিলো দু’শিশু। এক শিশু ওই বোতলের পানি পান করে মৃত্যুরকোলে ঢুলে পড়ে। ঘটনাটি শুধু হৃদয় বিদারকই নয়, দায়িত্বহীনতার উদাহরণ।
বোতল বিভ্রাট শুধু শিশুদের ক্ষেত্রেই নয়, বড়দেরও হরহামেশায় হয়। হচ্ছে। ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল বহুবিদকাজে লাগানোর জন্য যতোটা দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন, আমাদের সমাজ অতোটা সচেতন নয়। এমনিতেই যেখানে সেখানে ফেলার কারণে ভয়াবহ আকারে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। তার ওপর বোতল ব্যবহারে অসচেতনতার কারণে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে শুধু সচেতনতা বৃদ্ধিই নয়, কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা করার পদক্ষেপও প্রয়োজন। কীটনাশক কেন ওইসব বোতলে দেয়া বা নেয়া হবে? কৃষক ওই বোতলে কীটনাশক নিতে চাইলেও তা দিতে পারবেন না। মানব শরীরের জন্য যেসব তরল পদার্থ ক্ষতিকর তা কোনোভাবেই কোমলপানীয় বা পানীয় পানির বোতলে দেয়া নেয়া যাবে না। ওইসব পদার্থের জন্য অবশ্যই সতর্কতামূলক ছবি ছাপ দেয়া বোতল ব্যবহার করতে হবে। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। কীটনাশক বিষ রাখা বোতলের কাজ শেষ হলে তা দ্রুত পুড়িয়ে ফেলাই উত্তম। যে সমাজে এ ধরণের নির্দেশনা মেনে চলা দূরাস্ত, বাধ্যবাধকতার তেমন নজির নেই সেই সমাজ সভ্যতার কোনতিমিরে তা বোদ্ধাদের নিশ্চয় অনুমান করা কঠিন নয়।
হাকিমপুরের ৪ বছরের শিশু পরিত্যক্ত বোতল কুড়িয়ে নিয়ে খেলতে গিয়ে মারা গেছে। ওই বোতলে কেউ না কেউ কীটনাশক আনা নেয়ার কাজ করেছিলেন। তিনি বোতলের প্রয়োজনীয়তা ফুরোনোর পর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। পুড়িয়ে না ফেলে তিনি রাস্তার পাশে ছুড়ে দিয়েছেন। একজনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় শিশুর প্রাণগেছে। বিষয়টি কোনোভাবেই কী খাটো করে দেখা উচিত? অবশ্যই না। দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তির কারণে যখন প্রাণহানি, তখন তা অপরাধ। তাকে শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারলে সমাজ তার সুফল ভোগ করতো। কেন যে আমরা তা করতে পারি না, সেটাই সমাজের কাছে বড় প্রশ্ন।

Comments (0)
Add Comment