কেমন হবে রুপিতে বাণিজ্যিক লেনদেন

সম্পাদকীয়

পারস্পরিক আলোচনা-পর্যালোচনার মধ্যদিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতীয় রুপিতে বাণিজ্যিক লেনদেন শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিবেশী দুটি দেশ- বাংলাদেশ ও ভারত। চলতি সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই লেনদেন কার্যক্রম উদ্বোধন হওয়ার কথা। এতে তৃতীয় কোনো মুদ্রার সংশ্লিষ্টতা ছাড়া সরাসরি রুপি ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানির মূল্য বিনিময় করতে পারবে দুই দেশ। বলাবাহুল্য, এতে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের আলোচনা চলছে এক দশক ধরে।

ডলার বা অন্য কোনো মুদ্রা এড়িয়ে দুটি দেশ যখন নিজেদের মধ্যে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনা করে, আর্থিক পরিভাষায় একে বলা হয় ‘কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা’। অবশ্য বাংলাদেশ-ভারতের ক্ষেত্রে এর সূচনাকালে শুধুু রুপিতে লেনদেন শুরু হচ্ছে। অর্থাৎ ডলারের পরিবর্তে রুপিতে ঋণপত্র (এলসি) খুলে লেনদেন হবে। পরবর্তীকালে টাকায় লেনদেনের বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হবে। এটা পরিষ্কার যে, একই সঙ্গে দুটি দেশের নিজস্ব মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানি করা সম্ভব হলে বিষয়টি অধিকতর সুবিধাজনক হতো। যেহেতু বাংলাদেশ রফতানির তুলনায় আমদানি বেশি করে থাকে, তাই বাংলাদেশের মুদ্রা টাকায় পণ্য আমদানি করা গেলে সুফল বেশি পাওয়া যেত। বর্তমান ব্যবস্থায় লাভ বেশি হবে ভারতেরই।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য ২ বিলিয়ন ডলারের মতো। আর আমদানি হয় ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। রপ্তানি করে যে রুপি আসবে, সেটা বিল পরিশোধে ব্যবহার করতে পারব, এটাই আমাদের লাভ। দেশের রিজার্ভে বর্তমানে রুপির মজুদ যথেষ্ট নয়। ফলে রিজার্ভ থেকে ডলার দিয়ে রুপি কিনতে হবে। রুপি এবং টাকায় লেনদেনে রিজার্ভের বৈচিত্র্যকরণ শুরু হবে। আস্তে আস্তে ইউয়ান, রুবলের মতো মুদ্রাও রিজার্ভে যুক্ত হতে পারে। বর্তমানে ডলার ছাড়া ইউরো ও গ্রেট ব্রিটেনের কিছু মুদ্রা মজ্রদ আছে।

রুপিতে লেনদেন শুরুর মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যে একটি বৈচিত্র্য আসবে। তবে ভারত একটি বড় অর্থনীতির দেশ। এত বড় অর্থনীতির দেশের সঙ্গে তাদেরই মুদ্রায় বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে নীতি নির্ধারকদের নজর রাখতে হবে বাংলাদেশ যেন রুপির বিনিময় মূল্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বিশেষ করে, ডলারের সঙ্গে রুপির বিনিময় হার কত হবে, সেটা কি বাজারভিত্তিক হবে, না নির্ধারণ করে দেওয়া হবে-এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। রুপির রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। সেজন্য প্রথমেই শতভাগ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া চাই। সেজন্য সক্রিয় কূটনৈতিক উদ্যোগ জরুরি।

এটা না মিললে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে না, রুপিও অর্জিত হবে না। রিজার্ভে রুপি বাড়ানোর আরেকটি পথ হলো রেমিটেন্স। বাংলাদেশীদের জন্য ভারতে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলেই সেদেশ থেকে বৈধ পথে রুপি অর্জিত হবে। আমরা আশা করব, অচিরেই উভয় দেশের বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে উভয় দেশেরই মুদ্রা চালু হবে। এটি যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল।

Comments (0)
Add Comment