গত আদালতের রায় দ্রুত চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হোক

শনিবার মাগুরার চাঞ্চল্যকর শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে প্রধান আসামি শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান। অপর তিন আসামি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। যে দেশে মাসের পর মাস হত্যা ও ধর্ষণ মামলার তদন্ত ঝুলে থাকে, সে দেশে অপরাধ সংঘটনের মাত্র ৭৩ দিন ও বিচার শুরুর ২৫ দিনের (১৩ কার্যদিবস) মাথায় মামলার রায় বিরল দৃষ্টান্তই বটে। তবে সব ক্ষেত্রে এ রকমটি হতে দেখা যায় না। মাগুরার শিশুটির ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রবল প্রতিক্রিয়ার কারণেই এ রকমটা হয়েছে বলে ধারণা করি। গত ১ মার্চ শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওই দিন রাতেই শিশুটিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকার দুই হাসপাতালে চিকিৎসা করেও শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। ১৩ মার্চ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। এতে শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ ও অপর তিনজনকে আসামি করা হয়। শিশুটি মারা যাওয়ার পর হত্যাচেষ্টা মামলাটি স্বাভাবিকভাবে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে চার আসামির নামে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২৭ এপ্রিল মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ছুটির দিন ছাড়া টানা শুনানি চলেছে। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ শুনানি হয়। মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দ-বিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়। অপর তিন আসামি খালাস পাওয়ায় রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী শিশুটির মা। অন্যদিকে প্রধান আসামির মেয়ে বিচারকে একপেশে বলে অভিহিত করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, তার বাবার ফাঁসি দিয়ে যদি দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তা–ই হোক। ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। যেখানে প্রধান আসামি অপরাধ স্বীকার করেছেন, সেখানে রায়কে একপেশে বলার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিচারিক আদালতের রায় মানে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি নয়। অনেক মামলায় দেখা গেছে, নিম্ন আদালতের রায়ের পর উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর লেগে যায়। এ মামলার ক্ষেত্রে তেমনটি যেন না হয়। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অপরাধ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই মাগুরার শিশুটি ধর্ষণ ও হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া যতটা সম্ভব দ্রুত শেষ করে অপরাধীর শাস্তি কার্যকর করতে হবে। দেশের বিভিন্ন আদালতে ধর্ষণ ও হত্যার বহু মামলা এখনো বিচারাধীন। সব মামলা হয়তো সমানভাবে আলোচিত হয় না বা সব ক্ষেত্রে বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ–বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় না; সেসব মামলার বিচারও যথাসময়ে শেষ করার ক্ষেত্রে সরকার ও বিচার বিভাগের উদ্যোগী হওয়া উচিত।