নির্বাচন প্রশ্নে রাজনীতি সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে পারে

দেশের বর্তমান মূল সংকট তৈরি হয়েছে নির্বাচনের সময়কে কেন্দ্র করে। সুনির্দিষ্ট তারিখের প্রশ্নে সরকার, বিশেষত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি ও অন্য অনেক রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে চান প্রধান উপদেষ্টা, অন্যদিকে বিএনপিসহ ৫৩টি রাজনৈতিক দল চাচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে। বলা বাহুল্য, এই মতনৈক্যের মীমাংসা না হলে রাজনীতি সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে পারে। উল্লেখ করা যেতে পারে, জামায়াতে ইসলামী চাচ্ছে নির্বাচন রোজার আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি অথবা রোজার পর এপ্রিলে হোক। ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি দল চাচ্ছে মার্চের মধ্যে এবং নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মৌলিক সংস্কার ও চলমান বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ার আগে নির্বাচন চাচ্ছে না। বাস্তবতার নিরিখে বলা যায়, বিএনপি যেহেতু বর্তমানে সবচেয়ে বড় দল এবং এই দল বিপুলসংখ্যক ভোটারকে প্রতিনিধিত্ব করে, তাই ফয়সালাটা হতে হবে প্রধান এ দলটির সঙ্গে। অবশ্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক অথবা জনভিত্তি খুব বেশি না থাকলেও রাজনীতির ওপর দলগুলোর আদর্শিক ও দার্শনিক প্রভাব রয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, রাজনীতি সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠার আগেই বিএনপিসহ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাওয়া দলগুলোর সঙ্গে বসে প্রধান উপদেষ্টার একটা ঐকমত্যে পৌঁছানো দরকার। সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, সে বিষয়গুলোরও ফয়সালা হওয়া প্রয়োজন। কথা হচ্ছে, নির্বাচন তো একটা হতেই হবে। এ নিয়ে কারও মধ্যে কোনো প্রশ্ন নেই। সমস্যা তৈরি হয়েছে সময় নিয়ে। অনেকেই বলছেন, বর্তমানে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট চলছে, একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া সেগুলো যথাযথভাবে মোকাবিলা করা কঠিন হবে। অন্য পক্ষ বলছে, শুধু একটা নির্বাচনের জন্যই জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়নি। আগামী দিনগুলোয় দেশ যাতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এগিয়ে যেতে পারে, সুশাসন দ্বারা পরিচালিত হতে পারে, সেদিকটাই গুরুত্বপূর্ণ। দুপক্ষের কারও কথাই ফেলে দেয়ার মতো নয়। তবে এটাও ঠিক, বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে, এর অবসান হওয়াও জরুরি। ফলে আমরা বলব, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের সময় প্রশ্নে একটা মাঝামাঝি অবস্থান নেয়া যেতে পারে। সেটা একটা সময়, যখন চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া একটা বাস্তবসম্মত রূপ নেবে এবং সেই সময়ের ব্যাপারে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো আপত্তি করবে না। আমরা জানুয়ারির শেষে একটা সময়ে নির্বাচনের কথা বলতে পারি। অবশ্য আমরা জানি না, সরকার এবং বিএনপিসহ ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনপ্রত্যাশীরা এ প্রস্তাব মানবে কিনা। তবে আমাদের অবশ্যই বর্তমান অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে হবে। আমরা মনে করি, পৃথিবীতে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট থাকতে পারে না, যা টেবিলের আলোচনায় কাটানো সম্ভব নয়। শুধু দরকার ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বাস্তবকে স্বীকার করে নেয়া এবং সে অনুযায়ী আন্তরিকতার পরিচয় দেয়া। আমরা অচিরেই একটি সুসংবাদ শুনতে পারব বলে অপেক্ষায় আছি। সেই সুসংবাদ না শুনতে পারলে চরম অনিশ্চয়তায় পড়বে দেশ।