বিদেশে সবজি রপ্তানির বাজার ধরে রাখতে হবে

বাঁধাকপি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত সবজি বিদেশে রপ্তানি এটাই প্রথম নয়। কীটনাশক মুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত সবজির চাহিদা শুধু সিঙ্গাপুরে নয়, পশ্চিমা দেশেও। বাঁধাকপি বিদেশে রপ্তানির খবর ইতিবাচক হলেও বিগত দিনের কিছু অসাধু রপ্তানিকারকের অনৈতিকতা রুখতে না পারার উদাহরণও নেতিবাচক ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও যশোরসহ পাশর্^বর্তী অঞ্চলের মাটি শাক-সবজি আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। যদিও উৎপাদন বাড়ানোর কারণে মাত্রারিক্ত রাসায়নিক সার, অসহনীয় মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ মাটি ও মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই কারণে বিদেশে রপ্তানির বাজার সৃষ্টি হওয়ার পরও তা বন্ধ হয়ে গেছে। বাঁধাকপির ক্ষেত্রেও তেমনটি হবে না তো? সঙ্গত প্রশ্নের জবাব খুঁজে যতো দ্রুত আশু পদক্ষেপ নেয়া যায় ততোই কল্যাণ। কেননা, কৃষি উৎপাদনে সমৃদ্ধতা বৃদ্বিতে কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি জাতির সামনে এনে দিতে পারে স্বর্ণযুগ।
দেশে উৎপাদিত চিংড়ির প্রচুর চাহিদা ছিলো পশ্চিমা উন্নত দেশে। বিপুল পরিমাণের চিংড়ি রপ্তানি হতো। অর্জিত হতো বৈদেশিক মুদ্রা। পশ্চিমা দেশগুলো চাহিদা পূরণে আমাদের দেশের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে ঝুঁকেছে। শুধু ঝুঁকেছে বললে ভুল হয়, আমাদের কারণেই মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, চিংড়ির মাপ ও ওজন বাড়ানোর জন্য পেটে পুশ করা হতো এক ধরনের শাদা জেলি। এতে হাতে গোনা কিছু অর্থলিপ্সু অসাধু রপ্তানিকারক রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়লেও বাজার হারিয়েছে বাংলাদেশ। সবজির ক্ষেত্রে মাত্রারিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ অন্যতম অন্তরায়। কীটনাশক বেশি প্রয়োগের কারণে পরিবেশ যেমন ভারসাম্য হারায়, তেমনই মানুষ নানা মারণব্যাধীতে আক্রান্ত হন। জাতির গড় আয়ু কমে। অসুস্থতার কারণে দারিদ্র্যতা বাড়ে। জেনে শুনে পশ্চিমারা কেন এই বিষ কিনবে? কীট পতঙ্গ থেকে ফসল রক্ষার জন্য কীটনাশক ছাড়াও বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। তাতে খরচ কম হলেও পরিশ্রম বেশি বলেই কীটনাশক প্রয়োগের দিকেই ঝোক কৃষকের। আর রাসায়নিক সার? প্রয়োজনেই জমিতে দিতে হয়। পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন। অতিরিক্ত প্রয়োগে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়, ফলনেও অনেক ক্ষেত্রে বিপর্যয় দেখা দেয়। তারপরও কেন অতিরিক্ত প্রয়োগ? সচেতনতায় ঘাটতি নিশ্চয়।
কৃষি প্রধান দেশে কৃষক ও কৃষি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। নানা কারণে আমাদের সমাজে তা অসম্ভব অবস্থায় রয়েছে। গতবার আলুর আবাদ করে মোটাঅংকের লাভ হলো, এবার লোকসান। গতবার পিঁয়াজ চাষে অভাবনীয় লাভ, এবার অনেকটাই উল্টো অবস্থায়। কেন? চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা তখনই সম্ভব হয় যখন তা সংরক্ষণের সুব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়। আমরা এখনও পারিনি। পারবো যদি দেশের শাক-সবজি বিদেশে রপ্তানির বাজার ধরে রাখা সম্ভব হয়। এটা সম্ভব করা অসম্ভাব নয়।
কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা পণ্য যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দুর্নীতি দূর করার নির্ভেজাল পদক্ষেপ প্রয়োজন। রন্ধ্রে রন্ধ্রে যখন দুর্নীতি তখন বিশেষ কোনো বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত করার আশাও অনেকটা অবান্তর। তবুও উদ্যোগ নিতে হবে। উদ্যোগ সফল ও স্বার্থক করতে শীর্ষ কর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

Comments (0)
Add Comment