বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি : সংকট উত্তরণ জরুরি

সম্পাদকীয়

এ মুহূর্তে দেশে বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো সুখবর নেই। কয়লা সংকটে দেশের বৃহত্তম ও সর্বাধুনিক পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট ২৫ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। মজুত কয়লায় এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সচল ইউনিটটি ৩ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত চালু থাকার কথা ছিলো। ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন বাকিতে কয়লা এনে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচল রাখা হয়েছিলো। বকেয়া অর্থ এখন পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হলেও নতুন আমদানি করা কয়লা দেশে এসে পৌঁছুতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে। এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে প্রায় এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুনরায় দ্রুত পুরাপুরি সচল রাখার উদ্যোগ নেয়া না হলে দেশে লোডশেডিং কতোটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। আবহাওয়াবিদদের মতে, আগামী এক সপ্তাহ দেশে তাপমাত্রা বেশি থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে দেশের বিভিন্ন এলাকার শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের স্থায়ী সমাধান না হলে রপ্তানি খাতে এর প্রভাব পড়বে। ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি খাতের সমস্যা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই রপ্তানি খাত সচল রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উল্লেখযোগ্য অংশ উৎপাদিত হচ্ছে গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রে। কাজেই দেশের স্থলভাগে এবং সমুদ্রে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও গ্যাস উত্তোলনে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে আনুষঙ্গিক অন্যান্য সংকট কাটানোর পদক্ষেপও নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দীর্ঘমেয়াদে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে আমদানিনির্ভরতা কাটাতে দেশে মজুত কয়লা উত্তোলনে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। বিদ্যুৎ-গ্যাস খাতে চুরি-দুর্নীতি রোধে কর্তৃপক্ষের নমনীয় মনোভাবের কারণে দুর্নীতিবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সারা দেশে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি দৃশমান চুরি হলেও তা বন্ধে কর্তৃপক্ষের জোরালো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। বিদ্যুৎ-গ্যাস খাতে দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করা গেলে দেশবাসী ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে কিছুটা মুক্তি পাবে। বর্তমানে গ্রামীণ এলাকায় দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সেচের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে হাসপাতালের জরুরি সেবা যেমন বিঘিœত হচ্ছে, তেমনই অন্যান্য ক্ষেত্রেও হচ্ছে অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটের স্থায়ী সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে।

Comments (0)
Add Comment