আজ ৫ আগস্ট। চব্বিশের বর্ষা বিপ্লবের এক বছর পূর্তির দিন। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে সাড়ে ১৫ বছরে জাতির ঘাড়ের ওপর চেপে বসেছিলেন। মনে করেছিলেন তিনি আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন। তার পতন হবে এটি তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। হাসিনার অপশাসনের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দমনে তার খুনে বাহিনী ছিলো সিদ্ধহস্ত। জুলাই বিপ্লবকেও খুন-গুম ও মামলাবাজি করে গুঁড়িয়ে দেয়া যাবে- এমন ভেবেছিলো ফ্যাসিস্ট সরকার। তবে শত চেষ্টার পরও শেষ রক্ষা হয়নি হাসিনার। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সারা দেশের মানুষ একযোগে রাজপথে নেমে আসেন। শত শত জনকে হত্যার পরও কেউ পিছু হটেননি। তাই সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে বর্ষা বিপ্লব মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস হয় থাকবে। আগত দিনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ফ্যাসিবাদের পতনে ৫ আগস্টকে স্মরণ করবে মানুষ।
এক বছর আগের সময়ে দৃষ্টি দিলে আমাদের শিউরে উঠতে হয়। হাসিনা যারপরনাই নিষ্ঠুরতা চালিয়েছেন আন্দোলনকারীদের ওপর। এ ক্ষেত্রে শিশুরাও রেহাই পায়নি। এ আন্দোলনে ১৩৩ জন শিশু প্রাণ হারায়। নিজ দেশের মানুষকে হাসিনা পাখির মতো গুলি করে মেরেছেন। শত্রুদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী যেসব অস্ত্র ব্যবহার করে তিনি তা নিরস্ত্র জনতার ওপর ব্যবহার করেছেন। নিরাপত্তা বাহিনীকে সরাসরি প্রাণঘাতী এসব অস্ত্র প্রয়োগের আদেশ দেন। নিহতদের সাথে আহতদেরও জড়ো করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আহতরা যাতে চিকিৎসাসুবিধা না পান সে জন্য হাসপাতালগুলোর প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। এমনকি তাদের আটক রেখে চিকিৎসা না দিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মেরে ফেলার নির্দেশও দেয়া হয়েছিলো। আন্দোলনে নিহতের লাশ দাফন করতে বাধা দেয়া হয়েছিলো। জানাজা পড়তে দেয়া হয়নি। অসংখ্য মানুষকে বেওয়ারিশ হিসেবে কবর দেয়া হয়। হাসিনার খুনি বাহিনী যে নারকীয়তা চালিয়েছে তা সমকালীন বিশ্বে নজিরবিহীন।
এর আগে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুপ্ত কারাগার তৈরি করে অমানবিক নির্যাতন চালানোর এক ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু করা হয়। যারা এসব কাজ করত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেসব সদস্যকে পদোন্নতি ও পুরস্কৃত করা হতো, অবৈধ সুযোগ নেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হতো। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জন্য পুরো দেশকে কারাগার বানানো হয়েছিল। আইন আদালত কোথাও আশ্রয় ছিলো না। হামলা-মামলা করে সর্বস্বান্ত করা হয়েছে ভিন্ন মতাবলম্বীদের। আদালতকে নিজের আদেশের অনুগত করে রেখেছিলেন হাসিনা। এগুলো ছিলো দেশবাসীকে দমানোর আরেকটি মোক্ষম অস্ত্র। দেশের সম্পদ লুটাপাট করায় হাসিনার শাসনামল চোরতন্ত্র আখ্যা পেয়েছে। তার সৃষ্ট অলিগার্ক পুরো দেশকে লুটেপুটে খেয়েছে। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। সরকারি সেবাসংস্থাগুলো ছিলো জনগণের জন্য ফাঁদ। ঘুষ বাণিজ্যের অবাধ সুযোগ দেয়া হয়েছিলো দলীয় লোকদের। উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদ স্রেফ ভাগবাটোয়ারা করা হতো। এই অর্থ পাচার করা হতো বিদেশে।
জুলাই বিপ্লব হাসিনা নামক দানবের হাত থেকে দেশের জনগণকে মুক্ত করেছে। ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার দেশকে অনেকটা যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থায় পেয়েছে। রাষ্ট্রীয়কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছিলো। এমন পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে উত্তরণ ঘটছে। দেশে টেকসই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য গভীর সংস্কার প্রয়োজন। এ জন্য দরকার জাতীয় ঐক্য। অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। আশা করা যায়, এ ঘোষণার আলোকে দেশে সংস্কার এগিয়ে যাবে।