জাতির মেধা উন্নয়নে পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পুষ্টির জন্য সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজনীয় পরিমাণে প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাবার খাওয়া। মাছ-গোশত-দুধ এগুলো আমিষের সবচেয়ে সহজ উৎস। মেধাবী জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য দরকার দুধ। গবেষণায় দেখা গেছে, যে জাতি বেশি দুধ খায় মেধাবী মানুষের সংখ্যা তাদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। দুধে রয়েছে খাদ্যের সব পুষ্টি উপাদান। সুষম খাদ্য বলে পরিচিত দুধের ল্যাকটোজ শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষের বিকাশে সহায়ক। কিন্তু আমাদের দেশ দুধ উৎপাদনে এখনো স্বনির্ভর নয়। দেশে বছরে প্রায় এক কোটি ৫৮ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয় দেড় কোটি টনের মতো। ঘাটতি পূরণে এখনো বছরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে স্বাভাবিক পুষ্টির জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ২৫০ মিলিলিটার দুধ খাওয়া দরকার। সেখানে আমাদের প্রাপ্যতা মাত্র ২৩৫ মিলি লিটার। এটিও শুধু তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যাদের সামর্থ্য আছে। আমাদের দেশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা প্রতিবেলা ভাত-তরকারির সংস্থানও করতে পারেন না। কবে শেষ দুধ পাতে পড়েছে অনেকে মনেও করতে পারবেন না।
এমন পরিস্থিতিতে আমরা যে মেধাশূন্য জাতিতে পরিণত হচ্ছি এবং বিশ্বের দেশগুলোর তুলনায় জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ মেধানির্ভর সব বিষয়েই পিছিয়ে পড়ছি তা নানাভাবেই স্পষ্ট। বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালিত হবে সারাদেশে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের প্রায় আড়াই হাজার স্কুলশিশুকে দুধ পান করানো হবে। বর্ণাঢ্য র্যালি, সচেতনতামূলক সেমিনার, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ইত্যাদিও থাকবে কর্মসূচিতে। এগুলো গৎবাঁধা কর্মসূচি। সত্যিকারের অগ্রগতির জন্য আরো সমন্বিত কর্মসূচি দরকার। এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অংশীজনের সাথে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকদের সংলাপ হওয়া দরকার। দেশের অনেক জায়গায় দুধ উৎপাদনে বিপ্লবাত্মক অগ্রগতি হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ কিভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া যায় সেই উপায় বের করতে হবে। ভালো জাতের দুধেল গাভীর অভাব, গোখাদ্যের স্বল্পতা ও উচ্চমূল্য এবং দুধ বাজারজাতকরণের মতো যেসব জটিলতা রয়েছে তার সমাধান এবং এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের জোগান সহজ করা যায় কি না সে বিষয়ে সংলাপ জরুরি। এটি কারোরই না বোঝার কারণ নেই যে, প্রতি বছর চার হাজার কোটি টাকা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় করার চেয়ে সেই অর্থ দেশে বিনিয়োগ করাই বেশি যৌক্তিক। সত্য হলো- দেশ গড়ার জন্য যেমন অবকাঠামো দরকার, তেমনি স্বাস্থ্যবান জাতি গঠন করতে হলে জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতেই হবে। আর পুষ্টির ভিত্তি যে দুধ সেটির উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। দুধ উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে হবে। সারা দেশে দুধ উৎপাদনের অঞ্চলভিত্তিক কেন্দ্র বা হাব গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য যত ধরনের সহায়তা দরকার উদ্যোক্তাদের সেসব পাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। বিষয়টি কঠিন নয়, দরকার শুধু সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও নীতিনির্ধারকদের আন্তরিক সদিচ্ছা।