শর্ষের ভেতরের ভূত খুঁজে বের করতে হবে

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি দিবালোকের মতো সত্য হলেও সরকারি কোনো সূত্র সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলছে না। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাস পিলে চমকানো একটি তথ্য দিয়েছেন। গত সোমবার বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় তিনি বলেন, ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়ে কোনো কোনো পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায় কোনো পণ্যের দাম ১০০ ডলার দিয়ে আমদানি করা হলে সেটি ২০০ ডলার দেখানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, অনুমান করা কঠিন নয়। বিএফআইইউর কর্মকর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘নজরদারি জোরদার করার ফলে তা হচ্ছে না। এটা ঠেকানো গেছে। এখন কর ফাঁকি দিতে মূল্য কম দেখিয়ে যা আমদানি হচ্ছে, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। এই তালিকায় রয়েছে গাড়ি। এদিকেও তদারকি জোরদার করা হচ্ছে।’ এ ছাড়া হুন্ডির মাধ্যমেও প্রচুর অর্থ পাচার হচ্ছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালেই বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, বিএফআইইউ বা বাংলাদেশ ব্যাংক এই তদারকির কাজটি তখনই করেছে, যখন দেশে ডলারসংকট দেখা দিয়েছে। এর আগে তারা চুপচাপ বসে ছিলো। সে ক্ষেত্রে অর্থ পাচার রোধের ব্যর্থতার দায়ও সংস্থাটি এড়াতে পারে না। বিএফআইইউর কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা দুরূহ কাজ। কিন্তু তারা পাচার বন্ধে আগে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিলো না কেন? সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ এমন কথাও বলতেন যেন বাংলাদেশ ডলারে ভাসছে। যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যায়, সেসব দেশে অর্থের উৎসের কথা জিজ্ঞেস করা হয় না। ফলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয়ে গেছে, সরকার যদি প্রমাণ করতে পারে সেটি কর ফাঁকির অর্থ, তাহলে সেটি ফেরত আনার সম্ভাবনা আছে। ভারত এ প্রক্রিয়ায় পাচার হওয়া অনেক অর্থ ফেরত এনেছে। সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থ সম্পর্কে তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা ছিলো, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পাচারকারীদের তথ্য জানা যাবে, যদি বাংলাদেশ আন্তরিক চেষ্টা নেয়। অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটি প্রতিষ্ঠান আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে তদারকি বাড়ালে অর্থ পাচার কমবে আশা করা যায়।

সেই সঙ্গে বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, যারা ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেখিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার সাহসের সঙ্গে সেই কাজটি করতে পারবে কি না, তার ওপরই নির্ভর করে অর্থ পাচার কমবে না বাড়বে।

মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। মাঝেমধ্যে ধরাও পড়ছে। তাই অর্থ পাচার বন্ধ করতে হলে শর্ষের ভেতরের ভূত খুঁজে বের করতে হবে।

Comments (0)
Add Comment