লকডাউনের বিষয়টির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হোক

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবী যেন বদলে গেছে। মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা যেমন থমকে গেছে, তেমনি অর্থনৈতিকসহ নানা ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বে যেমন ক্রমাগত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি দেশেও হু হু করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, বাড়ছে লাশের সংখ্যা। চুয়াডাঙ্গায় মৃত্যু না থাকলেও করোনা পরিস্থিতি ক্রমশই অবনতির দিকে। করোনাভাইরাস মহামারির বিস্তারে বিশ্বের শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ঢুকে পড়ার পর রাজধানীকে দিয়ে শুরু করে সংক্রমণের কেন্দ্র বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক লকডাউনের পথে যাচ্ছে সরকার। তথ্য মতে, ঢাকার কিছু এলাকায় ‘পাইলট ভিত্তিতে’ লকডাউন শুরু করা হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে। ‘হটস্পট বা ক্লাস্টার এরিয়া’ বিবেচনায় পাড়া, মহল্লা বা ওয়ার্ড এলাকা লকডাউন করা হবে এবং শুরুতে সীমিত পরিসরে ঢাকার মধ্যেই লকডাউন করা হবে। কারণ হিসেবে আলোচনায় এসেছে, ঢাকাতেই কোভিড-১৯ এর রোগী বেশি। এছাড়া জানা গেছে- পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে অন্যান্য জেলা শহরেও লকডাউন করা হবে।
কিছুদিন হলো দেশে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অঘোষিত লকডাউন শিথিল করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। দোকান-পাট খুলছে এবং মানুষ বের হচ্ছে। ফলে এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা কতোটা জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন যখন জানা যাচ্ছে, কিছু এলাকায় ‘পাইলট ভিত্তিতে’ লকডাউন শুরু করা হবে এবং ‘হটস্পট বা ক্লাস্টার এরিয়া বিবেচনায় শুরু পাড়া, মহল্লা বা ওয়ার্ড এলাকা লকডাউন করা হবে। এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সারা দেশের পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। একদিকে দেশে জনসংখ্যা বেশি, অন্যদিকে প্রস্তুতি কতোটা এবং মানুষের সচেতনতার চিত্র আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছিলো মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোই যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি এ মরণব্যাধি মোকাবেলায় কতোটা কার্যকর! ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। একটি এলাকা চিহ্নিত করে সেখানকার প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে কতোজন মানুষ আক্রান্ত রয়েছে, সেই অনুযায়ী রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে সেটি পড়বে।’ এবং যে এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হবে, সেই এলাকা সম্পূর্ণ ব্লক রাখা হবে। সেই এলাকায় কেউ ঢুকবেও না, কেউ বেরও হবে না। ওই এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব জিনিসের দরকার হবে তা পৌঁছুনোর ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি সারাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিকে সামনে রেখেও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই টানা ৬৬ দিনের ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন নির্দেশনা মানা সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধ থাকা গণপরিবহনও চালু হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির উন্নতি নেই বলেই জানা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। জীবন ও জীবিকা সচল রাখা যেমন জরুরি তেমনি করোনাভাইরাস সংক্রমণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। হটস্পট চিহ্নিত করে লকডাউনের বিষয়টির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হোক। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় জরুরি। এর আগে একে অন্যের কাঁধে হাত রেখে গল্প করা, আড্ডার মধ্যেও কেউ কেউ মুখে মাস্ক পরলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না এমন বিষয় উঠে এসেছে। নিত্যপণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে দূরত্ব মানছেন না অনেকেই, এটিও আলোচনায় এসেছে- যা আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি কাম্য।

Comments (0)
Add Comment