স্টাফ রিপোর্টার: চীন সম্প্রতি তাইওয়ানকে ঘিরে সামরিক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে চলেছে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্র ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন করছে। এসব কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হতে পারে পার্শ্ববর্তী দ্বীপ রাষ্ট্র তাইওয়ানের ওপর আকস্মিক ও ব্যাপক সামরিক হামলার ক্ষমতা অর্জন। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২৫ সালের ৯ অক্টোবর প্রকাশিত এক সতর্কতামূলক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং তাইওয়ানের চারপাশে সামরিক মহড়া ও নজরদারির মাত্রা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করেছে। ২০২২ সালের পর থেকে অন্তত ছয় দফা বৃহৎ সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে চীনা বাহিনী, যা দ্বীপটির জন্য এক গুরুতর সংকেত।
তাছাড়া, চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তাইওয়ানের সাইবার নিরাপত্তা দুর্বল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। উন্নত স্ক্যানিং প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় দুর্বলতা শনাক্ত করে সেগুলোতে হামলার সুযোগ তৈরি করতে চায়।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে যে, চীন ‘হাইব্রিড যুদ্ধকৌশল’ প্রয়োগ করছে। এটি একটি বহুমুখী কৌশল যা শুধুমাত্র সামরিক বাহিনী দিয়ে হামলা নয়, বরং জনগণের মধ্যে সরকারে আস্থা কমানো, প্রতিরক্ষা ব্যয়ে জনসমর্থন হ্রাস এবং মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করাও অন্তর্ভুক্ত। এর পাশাপাশি ‘গ্রে জোন’ অপারেশন চালানো হচ্ছে, যেখানে সামুদ্রিক নজরদারি ও উপকূলরক্ষী টহল দিয়ে তাইওয়ানের ওপর ক্রমাগত চাপ বজায় রাখা হয়, যদিও তা সরাসরি যুদ্ধের পর্যায়ে পৌঁছায় না।
প্রতিবেদনের অন্যতম প্রধান বার্তা হলো, চীন যে কোনো মুহূর্তেই মহড়াকে বাস্তব যুদ্ধ অভিযানে রূপান্তরিত করতে পারে। এই আকস্মিক হামলা তাইওয়ান এবং তার আন্তর্জাতিক মিত্রদের অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলতে পারে, যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক সংকেত।
চীনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে দেখা গেছে, বেসামরিক মালবাহী জাহাজগুলোকে সামরিক পরিবহন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সৈন্য ও অস্ত্রবাহী যানবাহন নামানোর জন্য বিশেষায়িত উপকূলীয় অবতরণ সরঞ্জাম তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো স্পষ্টভাবে যুদ্ধ প্রস্তুতির ইঙ্গিত বহন করে।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-টে বেইজিংয়ের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এখানকার জনগণই, বাইরের কেউ নয়।” এই বক্তব্যে তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় সংকল্প প্রতিফলিত হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট শুধু তাইওয়ান নয়, পুরো পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তি তাইওয়ানের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবেলার চেষ্টা করছে। তবে, চীনের সামরিক আধিপত্য ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এই পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।
তাইওয়ান-চীন প্রেক্ষাপট শুধুমাত্র দুটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাইওয়ানের ওপর চীনের সামরিক চাপ পশ্চিমা দেশগুলোর কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে জড়িত, কারণ তাইওয়ান বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি সরবরাহের একটি প্রধান কেন্দ্র। যদি এখানে সংঘাত সৃষ্টি হয়, তাহলে গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।
এছাড়া, এ ধরনের সামরিক উত্তেজনা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোকে তাদের প্রতিরক্ষা কৌশল পুনর্বিবেচনার জন্য প্ররোচিত করবে। তাই, এই বিষয়টি শুধু তাইওয়ানের জন্য নয়, পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
সূত্র: তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, ২০২৫ সালের ৯ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদন