চুয়াডাঙ্গার দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে কুয়েতে গিয়ে মানবতের জীবন যাপন করছে ছোটসলুয়ার ইস্রাফিল

দেশে ফিরিয়ে আনতে আবারও টাকা দাবি : দালাল চক্রের বিরুদ্ধে চলছে মামলার প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে কুয়েতে গিয়ে মানবতের জীবন যাপন করছে ছোটসলুয়া গ্রামের ইস্রাফিল। জাল ভিসায় বিদেশে পাড়ি জমিয়ে খেয়ে না খেয়ে যেমন জীবন যাপন করছে, তেমনই পুলিশের ভয়ে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আর বিদেশ নয় দেশে ফিরতে চাইলে আবারও মোটা অংকের টাকা দাবি করছে দালাল চক্র। দরিদ্র পরিবারের একমাত্র সন্তানের এহেন অবস্থায় পরিবারের লোকজন উদবেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে কুয়েতের মাটিতেই ইস্রাফিলের বড়ধরনের ক্ষতিতে পড়তে হবে বলে দালালচক্র শাসিয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগে জানাগেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটসলুয়া গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে টেইলার্স মাস্টার ইস্রাফিল আলম হিজলগাড়ি বাজারে ট্রেলার্সের কাজ করে জীবন জীবিকা অতিবাহিত করে আসছিলেন। আত্মীয়তার সূত্র ধরে পরিচয় ঘটে মেহেরপুর জেলার পুরাতন দরবেশপুর গ্রামের মৃত মকছেদ আলীর ছেলে মিজানুর রহমানের সাথে। ইস্রাফিলের সরলতার সুযোগ নিয়ে মিজানুর মোটা অংকের বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে কুয়েতে নিয়ে যাবার প্রস্তাব দেয়। এতে ইস্রাফিল অসম্মতি জানালেও পিছু ছাড়ে না মিজানুর। এক পর্যায় মিজানুরের মিষ্টি কথায় রাজি হয়ে যায় সে। যে কথা সেই কাজ মিজানুর ইস্রাফিলকে কুয়েতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দালচক্রের সদস্য চুয়াডাঙ্গা শান্তিপাড়ার আব্দুর রশিদ ওরফে জসিম ওরফে আক্কাচ মোল্লা, স্ত্রী শাহানারা পারভীন ও ছেলে শাওনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। শেষমেশ ধারকর্য এবং সংসারের জিনিসপত্র বিক্রি করে ট্রেলার্সের ভিসা বাবদ মিজানুর ও রশিদের পরিবারের সদস্যদের হাতে বিভিন্ন সময়ে নগদ এবং ব্যাংকের মাধ্যমে সাড়ে ৮ লাখ টাকা তুলে দেয় ইস্রাফিল। শর্ত থাকে সব খরচ বাদ দিয়েও মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনে টেলার্সের কাজ পাবে সে। দালচক্রের প্রলোভনে পড়ে গত ২৭ এপ্রিল ২০১৮ সালে কুয়েতে পাড়ি জমায় ইস্রাফিল। সেখানে গিয়ে ইস্রাফিল জানতে পারে এটা ট্রেলার্সের ভিসা না।

তাও আবার জাল। কি আর করার জাল ভিসার কাগজ পকেটে নিয়ে ট্রেলার্সের কাজ না পেয়ে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কাজ করতে থাকে। তবে এভাবে আর কতদিন? পরে ওই দালাল চক্রের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করলে বিষয়টি এড়িয়ে যায় তারা। ধারকর্য করে কুয়েতে পাড়ি জমানো ইস্রাফিল শত কষ্টের মাঝেও পরিবারের সদস্যদের মুখ পানে চেয়ে দালাল চক্রের প্রতারণার বিষয়টি গোপন রেখে কাজ করতে থাকে। একপর্যায় বিষয়টি জানাজানি হলে দালালদের পরিবারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে ইস্রফিলের মা-বাবা ও স্ত্রী। তাতে কোনো কর্ণপাত করেন না তারা। একদিকে জাল ভিসা অন্য দিকে আকামা করতে না পারায় কুয়েতের মাটিতে নরকের জীবন যাপন করছেন তিনি। আর বিদেশ নয় বাড়ি ফিরতে আবারও দালালদের সাথে যোগাযোগ করলে দেশে ফিরতে হলে আরও ২ লাখ টাকা লাগবে বলে জানান তারা। এ যেনো মরার ওপর খাড়ার ঘা! একদিকে জাল ভিসা অন্যদিকে আকামা করতে না পারা তার ওপর বাড়ি ফিরতে আবারও টাকা দাবি সব মিলিয়ে মহাসঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন ইস্রাফিল। মিজানুর ও রশিদ কুয়েতে অবস্থান করায় ই¯্রাফিলের স্ত্রী দালাল মিজানুর ও রশিদের বাড়িতে যোগাযোগ করলে রশিদের ছেলে শাওন কুয়েতের মাটিতে ইস্রাফিলের বড় ধরণের সমস্যা হবে বলে হুমকি ধামকি দেয়। কুয়েতের মাটিতে স্বামীর এ অবস্থা এবং দু’টি সন্তান নিয়ে মনবতের জীবন যাপন করছেন অসহায় রেখা। বিষয়টির প্রতি চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের সু-দৃষ্টি কামনা করেছে বিপদগ্রস্ত ইস্রাফিলের পরিবার। কুয়েতে থাকা ইস্রাফিল ফোনের মাধ্যমে জানান, দালালচক্র যে কোম্পানীর মাধ্যমে এখানে এনেছিলো সে কোম্পানীর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়; জাল ভিসার কারণে আকামা লাগানো যাচ্ছে না। মাসখানেকের মধ্যে হয় দেশে ফেরত না হয় আকামা করতে না পারলে জেলের ঘানি টানতে হবে। এসব দালালদের খপ্পরে পড়ে আমার মতো বিভিন্ন জেলার মানুষ কুয়েতে আজ মানবতের জীবন-যাপন করছে। এসব দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আমার মতো অনেকেই প্রতারিত হয়ে সর্বস্ব হারাবে। রশিদ এবং মিজানুরের মতো দালালদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া দরকার। যাতে করে আমার মতো আর কেউ প্রতারণার শিকার না হয়।

 

Comments (0)
Add Comment