চুয়াডাঙ্গার সাবেক কৃতি অ্যাথলেট সাইদুর রহমান মালিক অসুস্থ শারীরিক খোঁজ খবর নিলেন তার সতীর্থ খেলোয়াড়রা

স্টাফ রিপোর্টার: খেলোয়াড়ি জীবনে একাধিক খেলায় নিজেকে যেমন উজ্জ্বলভাবে মেলে ধরেছিলেন, তেমনি ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও ভূমিকা রেখেছিলেন চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়াঙ্গণে। ৮০’র দশকের সাড়া জাগানো হকি খেলোয়াড় তৎকালীন গ্রেটার কুষ্টিয়া জেলা হকি টিমের হয়ে বাংলাদেশ হকি অঙ্গণে চুয়াডাঙ্গার জাত চিনিয়েছিলেন। সে সময় চুয়াডাঙ্গা মহাকুমা থাকায় কুষ্টিয়া জেলা টিমের হয়ে খেলা অধিকাংশ হকি খেলোয়াড়ই ছিলো চুয়াডাঙ্গার। কুষ্টিয়া জেলা টিমের হয়ে দেশের বিভিন্ন জাতীয় লীগ ও টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে জেলার সুনাম বয়ে নিয়ে আসতো যে তরুণ তিনি হলেন-চুয়াডাঙ্গার সাইদুর রহমান মালিক। সেই টগবগে তরুণ তুর্কী হকি খেলোয়াড় সাইদুর রহমান মালিক আজ জীবনের শেষ বিকেলে পৌঁছে গেছেন। স্ট্রোক ও বার্ধক্য জনিত কারণে তিনি অনেকটা শয্যাশায়ী বলা চলে। তাই তো সেই চিরসবুজ তরুণ টগবগে সাইদুর রহমানকে দেখতে তার শয্যা পাশে ছুটে যান তার সে সময়কার সতীর্থ খেলোয়াড়রা ও অপেক্ষাকৃত জুনিয়র খেলোয়াড়েরা। গতকাল শনিবার বিকেলে সাইদুর রহমান মালিকের চুয়াডাঙ্গা শহরের জিনতলা মল্লিকপাড়ার বাসায় গিয়ে তার সতীর্থ খেলোয়াড়রা অশ্রু সংবরণ করে ফিরে যান সেই সোনালী অতীতে। বার্ধক্যের কষ্ট-যন্ত্রণাকে কিছু সময়ের জন্য ভুলে গিয়ে সতীর্থ খেলোয়াড়দের পেয়ে অবগাহন করে চলে যান রোমাঞ্চকর খেলোয়াড়ি জীবনের দিনগুলোতে। অনেকটা আবেগে আপ্লুত হয়ে শয্যা ছেড়ে উঠে বসেন সাইদুর রহমান (৬৮)। স্মৃতির পাতা থেকে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে স্মরণ করতে থাকেন অতীতের সেই দিনগুলির কথা। খ্যাতিমান এই হকি খেলোয়াড় শুধু হকি খেলেই ক্ষান্ত থাকেননি। জাতীয় আন্ত:স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ২০০ ও ৪০০ মিটার (স্প্রিন্ট) দৌড়ে খুলনা বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে একাধিকবার জাতীয় পর্যায়ের কম্পিটিশনে অংশ নিয়েছিলেন। একাধিকবার অর্জন করেছিলেন ব্রোঞ্জ ও রোপ্য পদক। শুধু তাই নয় ফুটবল খেলায়ও ছিলেন পারদর্শী। তার সতীর্থ ফুটবল খেলোয়াড় চুয়াডাঙ্গা ডি.এফ.এর সহ-সভাপতি সাবেক ফুটবলার রেজাউল হক জোয়ার্দ্দার রেজা বলেন, সাইদুর রহমান মালিক হকিও অ্যাথেলেটিক্স প্রতিযোগিতার পাশা-পাশি চুয়াডাঙ্গার ফুটবল অঙ্গণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে ও চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী পরিষদে দায়িত্ব পালন করেছেন। একাধিক খেলায় পারদর্শী সাইদুর রহমান বর্তমানে বার্ধক্য জনিত কারণে অনেকটা নিজ গৃহে অন্তরিন। তাইতো মনটা ছুটেছিল তাকে একবার দেখে যাই। সঙ্গে করে আরও কিছু সাবেক খেলোয়াড়দের নিয়ে এসেছিলাম। আমাদেরকেও একদিন এভাবে শয্যাসায়ী হতে হবে কিন্তু মাঝেমধ্যে মনে হয় চুয়াডাঙ্গা ক্রীড়াঙ্গণের সাবেক কৃতি খেলোয়াড়রা আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড় চুয়াডাঙ্গায় সেভাবে আর তৈরি হচ্ছে না। সোনালী অতীতের সেই ধারা ধরে রাখতে দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়াঙ্গণকে চাঙ্গা রাখতে হবে।
গতকাল শনিবার শেষ বিকেলে সাবেক কৃতি খেলোয়াড় সাইদুর রহমান মালিকের শারীরিক খোঁজ খবর নেয়ার জন্য তার শয্যা পাশে উপস্থিত হন চুয়াডাঙ্গা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সাবেক কৃতি ফুটবলার রেজাউল হক জোয়ার্দ্দার রেজা, সাবেক কৃতি ফুটবলার ও এফসির সাবেক ফুটবল কোচ সরোয়ার হোসেন জোয়ার্দ্দার মধু, সাবেক কৃতি ফুটবলার শহিদুল ইসলাম গুরখা, সাবেক ফুটবলার ও ফুটবল রেফারি আজিজুল হক শীল এবং ক্রীড়া সংগঠক মহাসিন রেজা।
রেজাউল হক জোয়ার্দ্দার রেজা আরও বলেন, আমিসহ সে সময় কুষ্টিয়া জেলা হকি দলের হয়ে চুয়াডাঙ্গার যে সকল খেলোয়াড়রা মাঠ কাঁপাতো তারা হলেন, চুয়াডাঙ্গা শহরের সন্টু, জাফর, ফনু, রতন, মিজান, সেন্টু, টোটন জোয়ার্দ্দার, ইয়াকুব হোসেন, আলমডাঙ্গা নাগদহর সুলতান, বাদশাসহ অনেকে।
উল্লেখ্য, একাধিক খেলায় পারদর্শী কৃতি এই খেলোয়াড় ও সংগঠক সাইদুর রহমান মালিক চুয়াডাঙ্গা জ্বীনতলা মল্লিকপাড়ার মৃত মজিবর রহমানের পুত্র। সাইদুর রহমান মালিকের পরিবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মফিজুর রহমান জোয়ার্দ্দার বলেন, তার বাবা মজিবর রহমান মালিক ছিলেন পাকিস্তান আমলে চুয়াডাঙ্গা মহাকুমা জামায়াতের রোকন এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও জামায়াতের রোকন পদবি লাভ করেন।