বাংলাদেশেও বাড়ছে জনপ্রিয়তা

দেশে ক্রমেই দর্শকপ্রিয় হচ্ছে পাকিস্তানি নাটক। পারিবারিক বন্ধন, সুস্থ সংস্কৃতিসহ হৃদয়গ্রাহী অভিনয়ের জন্য নাটকগুলো বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভারতের হিন্দি বা বাংলা, তুর্কি, কোরিয়ান সিরিজের পাশাপাশি পাকিস্তানি টিভি সিরিজও দেশে তৈরি করেছে একটি দর্শক শ্রেণি। তবে বাংলাদেশে পাকিস্তানের টিভি চ্যানেল দেখা যায় খুব কম। মূলত ভিডিও শেয়ারিং ইউটিউব আর দু-একটি আন্তর্জাতিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই দর্শক শ্রেণি তৈরি হয়েছে এসব টিভি সিরিজের। উর্দু ভাষায় নির্মিত এসব পাকিস্তানি সিরিজ নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেও রয়েছে বাংলাদেশি দর্শকদের একাধিক গ্রুপ। এসব গ্রুপের সদস্য সংখ্যা লক্ষাধিক। যেখানে পাকিস্তানি নাটক নিয়েই প্রতিনিয়ত হচ্ছে চর্চা। এসব নাটকে মধুর প্রেমময়ী আবেদন থেকে শুরু করে হালকা-হাসির পারিবারিক গল্পগুলো সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়। আকর্ষণীয় গল্প, দুর্দান্ত অভিনয় এবং সীমিত পর্বের ঝরঝরে চিত্রনাট্য যেন দর্শকদের মন কাড়ে। রোমান্টিক থেকে শুরু করে সমাজভিত্তিক গল্প- সব ধরনের নাটকই রয়েছে তাদের ঝুলিতে। যা তরুণ থেকে শুরু করে বয়স্ক-সব বয়সের দর্শকের বিনোদনের রসদ জোগাচ্ছে।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে এসব নাটকের নতুন পর্ব দেখতে দর্শক আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসেছে বেশ কিছু নতুন ধারাবাহিক। যা নিয়ে অনলাইনে চলছে চর্চা। স্বল্প সময়ের মধ্যেই নাটকগুলো দর্শক আগ্রহ তৈরি করে নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে ‘বিরিয়ানি’। এতে জুটি বেঁধেছেন রামশা খান ও খুশহাল খান। জাফর মাইরাজের লেখায় এটি পরিচালনা করেছেন বাদার মেহমুদ। প্রচার শুরু করেছে নাটক ‘জিনকি শাদি উনকি শাদি’। এতে প্রথমবার একসঙ্গে অভিনয় করছেন ওয়াহাজ আলি-সেহার খান। এটি পরিচালনা করেছেন সাইফুল হাসান। সৈয়দ নাবিলের লেখা গল্পে কমেডি ও হরর, এ দুইয়ের মিশ্রণ রয়েছে এতে। যা দর্শকের মধ্যে আরও বেশি কৌতূহল তৈরি করেছে।

বাংলাদেশি দর্শক আগ্রহে রয়েছে পাকিস্তানের আরও একটি সিরিয়াল ‘পামাল’। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাবা কামার ও উসমান মুখতার। জঞ্জাবিল অসিম শাহের লেখা এবং খিজার ইদ্রিসের পরিচালনায় নাটকটির গল্প মালিকা ও রাজা নামের দুজন ভিন্ন মেরুর মানুষকে নিয়ে, যাদের পথ অপ্রত্যাশিতভাবে এক হয়ে যায়। তেহরিম চৌধুরী প্রযোজিত এ নাটকে আরও রয়েছেন আদনান জাফর ও অ্যানি জাইদি। প্রচার চলছে ‘ম্যায় জামিন তু আসমান’। আহমেদ ভাট্টির পরিচালনায় এবং আব্দুল খালিদ খানের লেখা এ নাটকটিও প্রযোজনা করছেন তেহরিম চৌধুরী। এটি একটি বাস্তবধর্মী ও প্রভাবশালী গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে। প্রচারচলতি আলোচিত আরও একটি নাটক ‘মাসুম’। এ নাটকের মধ্য দিয়ে দুবছর পর কামব্যাক করছেন ইমরান আশরাফ। তার সঙ্গে প্রধান চরিত্রে আছেন সোনিয়া হুসেন ও মিকাল জুলফিকার। বারকাত সিদ্দিকীর পরিচালনায় এ নাটকের গল্প লিখেছেন কন্টেন্ট লাইন। নাটকটিতে ইমোশনাল ইনটেনসিটি এবং বহুস্তরীয় গল্প বলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সিদরা নিয়াজি ও ওয়াসিম আব্বাসের মতো শক্তিশালী পার্শ্ব-অভিনেতারাও এতে রয়েছেন।

টিভি প্রচার ও জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে সব সময় থাকছে পাকিস্তানের একাধিক ধারাবাহিক। সাম্প্রতিক সময়ে দর্শকনন্দিত হয়েছে ‘মিম সে মুহাব্বাত’ নাটকটি। এতে প্রেম, ভাগ্য এবং আকস্মিক সাক্ষাতের গল্প বলা হয়েছে। এটি ছিল সব বয়সি দর্শকের জন্য একটি প্রেমের গল্প। মূল চরিত্রে রয়েছেন আহাদ রাজা মীর এবং দানানীর মোবিন। তারা একে অপরের থেকে খুব আলাদা, কিন্তু ভাগ্য তাদের একত্রিত করে। এ ছাড়া রয়েছে ‘ইশক মুরশিদ’ নামের আরও একটি নাটক। দুটি ভিন্ন পটভূমির ব্যক্তিকে নিয়ে আবর্তিত হয় এর গল্প, যারা ভাগ্যক্রমে একত্রিত হয়। এ নাটকে অভিনয় করেছেন বিলাল আব্বাস খান, দুর-এ-ফিশান সালিম, হিরা তারিন, ওমাইর রানা, আলী গুল মাল্লাহ প্রমুখ। ট্রেন্ডিং তালিকায় রয়েছে ‘সুন মেরে দিল’। এর গল্পে দেখা যায়, কীভাবে একজন ব্যক্তির নিষ্ঠা নীরবে বিকশিত হতে পারে, প্রায়শই অলক্ষিত থাকে। এ সিরিজে মায়া আলী, ওয়াহাজ আলী, শাহভীর কাদওয়ানি, হিরা মানি এবং আমার খানের মতো প্রতিভাবান অভিনেতারা অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া রয়েছে ‘নূর বানো’। নূরকে কেন্দ্র করে এর গল্প আবর্তিত হয়েছে। একজন এতিম যে আগাজিকে ধন্যবাদ জানায়, যিনি তাকে লালনপালন করেছেন। আগাজির ছেলে মুরাশ তাকে বিয়ে করে কিন্তু অনিচ্ছায়, তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। সেখানে গিয়ে তিনি আলভিনার প্রেমে পড়েন। দীর্ঘ সময় পর তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। এতে অভিনয় করেছেন মাহনূর বালোচ, ইমরান আব্বাস, সামিনা আহমেদ, নাদিয়া হুসেইন, তুবা সিদ্দিকী, মুস্তাফা কুরেশি প্রমুখ।

স্বাধীনতাপরবর্তী পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে খুব একটা সাংস্কৃতির আদান প্রদান হয়নি। ভাষাগত সমস্যা ছিল কিছুটা। তবে টিভি সিরিজগুলো উপভোগের ক্ষেত্রে ভাষার বিষয়টি খুব একটা বাধার সৃষ্টি করছে না বলেই মন্তব্য করছেন দর্শক। তাদের দাবি, ভারতের হিন্দি ভাষার সঙ্গে উর্দু কিছু শব্দগত পার্থক্য রয়েছে। তাই যারা নিয়মিত হিন্দি ভাষায় নানা ধরনের কনটেন্ট দেখে অভ্যস্ত, তাদের কাছে উর্দু ভাষা বুঝতে বেগ পেতে হয় না। এ ছাড়া সব সিরিজেই থাকে ইংরেজি সাব-টাইটেল। এ কারণে উর্দু বা হিন্দি না বুঝলেও চলে।

এদিকে বাংলাদেশে ৯০-এর দশক থেকে হিন্দি সিরিয়ালের জনপ্রিয়তা দেখা যায়, এরপর তুর্কি এবং কোরিয়ান সিরিজের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। তবে উর্দু নাটকের জনপ্রিয়তা অতি সাম্প্রতিক। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৫ সাল বা তারও আগে থেকে এ দেশের মানুষ পাকিস্তানি এসব টিভি সিরিজ দেখা শুরু করেন। পাকিস্তানি সিরিজ নিয়ে তৈরি হওয়া এসব ফেসবুক গ্রুপের কার্যক্রমবিধি লক্ষ করলে জানা যায়, যাত্রালগ্ন থেকে স্বল্পসংখ্যক সদস্য এসব গ্রুপে যুক্ত ছিলেন। তবে যারাই ছিলেন সবাই পাকসিরিজের দর্শক। দিন দিন এসব গ্রুপের সদস্য বাড়ছে, যা ছাড়িয়েছে লাখের ওপরে। গ্রুপ এডমিনদের ভাষ্যমতে, মূলত করোনার সময় থেকেই পাকসিরিজের প্রতি দেশের দর্শকের আগ্রহ তৈরি হয়। ঘরবন্দি মানুষ তখন অনলাইনে এসব সিরিজ দেখেই আনন্দের খোরাক জোগাতেন। এরপর থেকেই দিন দিন এর জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখী।