নজরুল ইসলাম: তিল থেকে তাল এটি একটি প্রচলিত বাগধারা। যার অর্থ ছোট কোন জিনিসকে অতিরঞ্জিত করা। এ তিল হচ্ছে ভোজ্য তেল সৃষ্টিকারী একটি ফসল। বাজারে বিভিন্ন ধরণের ভোজ্য তেল থাকায় এবং দাম বেশি হওয়ায় তিলের তেলের তেমন একটি চাহিদা নেই। তাই চুয়াডাঙ্গা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তিলের চাষ। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই তিল কি তা চেনেন না। এক সময় ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে প্রচুর তিল চাষ হতো। যখন থেকে বাজারে সয়াবিন তেলের আমদানি শুরু হয় অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটার কারণে সরিষা, তিষি, তিল ইত্যাদি তৈল জাতীয় ফসলের আবাদ কমতে থাকে। সরিষা তেলের কদর থাকায় এখনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমিতে সরিষা আবাদ হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তিল, তিষির একেবারেই আবাদ কমে গেছে। তবে বর্তমান সময়ে হাতেগোছা কিছু কৃষক বাব দাদার আমলের ফসল হিসেবে সামান্য জমিতে এ চাষ করে থাকেন। এক সময় চুয়াডাঙ্গার প্রত্যেক গ্রামে তিলের চাষ হতো ব্যাপক হলেও বর্তমান সময়ে খুব অল্প জমিতে এ চাষ হচ্ছে। তিল চাষ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে যানা যায়, বর্তমানে বাজারে নানান ধরনের সয়াবিন ও পামতেল পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত নানা ধরনের ভোজ্য তেলের সহজ প্রাপ্তি ও বেশি ফসলের আশায় নিত্য নতুন জাতের ফসলের আবাদের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে কৃষকরা। তিল চাষি জামাল হোসেন বলেন, মাটির ঊর্বরশক্তি ফেরাতে তিল চাষের জুড়ি নেই। কারণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে নানারকম ফসলের আবাদের ফলে জমির উর্বরশক্তি কমে যাচ্ছে। এসব জমিতে তিল চাষ করে জমির উর্বরশক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, জেলাতে এ বছর ১৫৮ হেক্টর জমিতে তিলের চাষ হয়েছে। এটি একটি অপ্রধান ফসল হওয়ায় সে ভাবে প্রনদনা দেয়া সম্ভব নয়। তবে তিল চাষের জন্য কিছু কৃষককে সহযোগিতা করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন এক থেকে দেড় টন হয়ে থাকে। এর বাজার মূল্যও ভালো। চাষিরা তিল চাষ করলে লাভবানই হবে। কারণ তিল চাষে খরচ খুবই কম। ঝুকিও কম। একজন কৃষিবিদ বলেন, কৃষক জমিতে তিল চাষ করে একাধারে নানারকম উপকার পেয়ে থাকেন। যেমন তিল গাছের যেসব পাতা জমিতে পড়ে তা পঁচে মাটির সাথে মিশে সবুজ সারের কাজ করে। তাতে জমির উর্বরশক্তি বৃদ্ধি পায়। এ জমিতে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ফসলের চাষ করতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। এ গাছের কান্ড অর্থাৎ ডাঁটা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হয়। তিল থেকে ভোজ্য তেল ও খৈল পাওয়া যায়। এ ফসলে তেমন কোন রোগ বালাই নেই বললেই চলে। খুব কম খরচে সহজ পদ্ধতিতে আবাদ করা যায়। তিল থেকে শুধু তেলই পাওয়া যায় না। এ তিল দিয়ে চাউলের আটা, চাউল ও গুড় অথবা চিনি সহযোগে নানারকম পিঠা, পায়েস তৈরি হয়। যা ভোজন রসিক মাত্রেই জিভে জল আসে। তিলেরখাজা তৈরি হয় এই তিল দিয়ে। ভোজ্য তেল হিসাবে তিলের তেল খুবই ভাল। তিলের খৈল গবাদিপশুর খাদ্য ও জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমরা তিলের মত উপকারী ফসলের কথা ভুলতে বসেছি। বছরে রবি এবং খরিফ উভয় ঋতুতেই তিলের চাষ হয়ে থাকে। তবে খরিপ ঋতুতে চাষ করলে অপেক্ষাকৃত বেশি ফলন পাওয়া যায়। তিল সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। কালো তিল ও সাদা তিল। কালোতিল একবারে কুচকুচে কালো। ফলে নতুন প্রজন্ম সাদা তিল হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলার সৌখিন খাবারের স্বাদ থেকে। কমবেশি যে তিল এবং তিলের তেলের চাহিদা যে নেই তা নয়। অন্যান্য ফসলের মত তিল চাষ যন্ত করে করলে কৃষ লাভবনাই হবে। আর কুষ্টিয়ার তিলের খাজাতো দেশব্যাপী রয়েছে তার পরিচিতি।