ভারত–বাংলাদেশ টানাপোড়েনে বারাণসীর শাড়ি ব্যবসায় ধস

স্টাফ রিপোর্টার:ভারতের বারাণসীর ৫৫ বছর বয়সি মোহাম্মদ আহমদ আনসারি সারাজীবন কাটিয়েছেন বেনারসি শাড়ি বুনে। তিনি বলেন, ‘মসজিদের আজান আর মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনির মধ্যে তাঁতের শব্দই আমার জীবনের সুর।’ একসময় এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প ছিল তার গর্ব, কিন্তু এখন বিক্রি পড়েছে অর্ধেকে।

বারাণসীর এই বয়নশিল্পীর (কাপড় তৈরি বা বুননের কাজ) দুরবস্থার পেছনে অন্যতম কারণ ভারত–বাংলাদেশের চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা। গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের মুখে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। ঢাকা এখন দিল্লির কাছ থেকে হাসিনাকে ফেরত চায়, আর এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রভাব পড়ছে বাণিজ্যে।

বেনারসি। ছবি: আল-জাজিরা
এপ্রিলে বাংলাদেশ ভারতের কিছু পণ্যের আমদানি সীমিত করে, যার মধ্যে ছিল সুতা ও চাল। জবাবে ভারত ১৭ মে থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাবার স্থলপথে আমদানি বন্ধ করে দেয়। ফলে বাংলাদেশ থেকে শাড়ি রপ্তানি করতে এখন সাগরপথ ব্যবহার করতে হচ্ছে, যা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।

বেনারসি শাড়ি বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত এর সূক্ষ্ম নকশা, বিলাসবহুল রেশম ও সোনালি-রুপালি জরি কাজের জন্য। একটি শাড়ি বুনতে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগে, আর দাম পড়ে লাখ টাকাও ছাড়ায়। কিন্তু বাংলাদেশের বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানান আনসারি।

এই শিল্প আগেও বহু ধাক্কা খেয়েছে—নোটবন্দি, বিদ্যুতের দাম বাড়া, করোনার প্রভাব এবং গুজরাটের সুরতের আধুনিক পাওয়ারলুমের প্রতিযোগিতা। এখন কারিগরের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে প্রায় দুই লাখে দাঁড়িয়েছে।

বারাণসীর পাইকারি ব্যবসায়ী পবন যাদব বলেন, আমরা প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার শাড়ি পাঠাতাম। এখন সব বন্ধ। সেখানে ক্লায়েন্টরা ১৫ লাখ টাকার দেনা শোধ করতে পারছেন না।

তবে এই নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমবঙ্গের বয়নশিল্পীদের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। নদিয়ার শান্তিপুরের তাঁত ব্যবসায়ী তারকনাথ দাস বলেন, বাংলাদেশি শাড়ি আমাদের বাজারের ৩০ শতাংশ দখল করেছিল। এখন আবার অর্ডার বাড়ছে, দুর্গাপূজায় বিক্রি গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সংকট যতদিন চলবে, ততদিন বারাণসীর তাঁতশিল্পীরা ক্ষতির মুখে থাকবেন—আর পশ্চিমবঙ্গের তাঁতীরা পাচ্ছেন সাময়িক স্বস্তি। দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলে এই ঐতিহ্যবাহী বেনারসি শাড়ির জগৎ আরও কঠিন সময় পার করবে।