রিকশায় উঠলেই গান শোনান রেজাউল

নারায়ণ ভৌমিক: চলতে পথে প্রতিদিন মানুষের সাথে মানুষের দেখা হয়। অনেক মানুষের স্মৃতি মন থেকে হারিয়ে যায়। কিছু স্মৃতি স্মরণীয় বরণীয় হয়ে ভেসে ওঠে মানুষের হৃদয় পটে। কি বিচিত্র এই পৃথিবী, কি বিচিত্র ইতিহাস, কত বিচিত্র মানুষ। চলতে পথে ঝিনেইদহ জেলার কোটচাঁদপুর বলুহার বাসস্ট্যান্ডে এ প্রতিবেদকের দেখা হয় ভদ্র ও সৌখিন বেশি সরল সোজা ব্যতিক্রমী এক রিকশা চালকের সাথে। দেড়শ’ টাকা ভাড়া চুক্তিতে রিকশায় চেপে বসতেই শুরু করে দেন গান। গানে গানে মাতিয়ে তোলে প্রায় দু’ঘণ্টা। এক মুঠো ভাত ছায়াছবির গান। এরা পাবলিক ভাই, এরা পাবলিক ভাই, এরা সব জানে, এরা ভিক্ষে চায় না, কর্জ চাই না, চাই শুধু হক পাওনা। এরা পাবলিক ভাই, এরা পাবলিক ভাই, এরা সব জানে, এদের ভিতরে কি, এদের বাইরে কি, এদের তো সব জানা। চাইলেই এদের মাথায় তুলে নেও, চাইলে তোমরা ছুড়ে ফেলে দেও। এরা ভিক্ষে চাই না, কর্জ চাই না, চাই শুধু হক পাওনা——। রিকশা চালকের নাম পরিচয় জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, নাম রেজাউল করিম। বয়স (৫৫) বছর। পিতার নাম মৃত নুর বকস ম-ল। গ্রাম কাশিপুর। উপজেলা কোটচাঁদপুর, জেলা ঝিনেইদহ। ছোট বেলা থেকে তিনি বধির। তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে রেজাউল করিম সকলের বড়। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন গ্রামের স্কুলে। প্রায় ১৭ বিঘা জমির মালিক ছিলেন রিকশা চালক রেজাউল করিম। যুবক বয়সে কাজ কর্ম করেনি। জমি বিক্রি করে শুধু ঘুরে বেড়িয়েছেন। এখন তিনি নিঃশ্ব রিক্ত অসহায়। সহায় সম্পদ হারিয়ে রেজাউল করিম এখন অনিক বাবু সোনামনি নামের একটি রিকশা প্রতিদিন একশ’ টাকা ভাড়ায় নিয়ে ২০ বছর যাবত কোটচাঁদপুর উপজেলা শহরসহ আন্দুলবাড়িয়া সড়কে যাত্রী নিয়ে যাতাযাত করেন। স্ত্রী রোকেয়া বেগম সংসার ছেড়ে চলে গেছে। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক রিকশা চালক রেজাউল করিম। ছেলে মেয়ে বিবাহিতা। এক ছেলে আলমসাধু চালায়, অপর ছেলে ইজিবাইক চালক। থাকে যশোর শহরে। মাঝে মাঝে দু’ছেলে আসে বাবার খোঁজখবর নিতে। সংসারে একমাত্র বুদ্ধা মা দুলু বিবি (৭৫)। বৃদ্ধা মাকে রিকশায় নিয়ে মাঝে মাঝে ঘুরতে বের হন তিনি। স্ত্রী সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ায় রেজাউল করিম আর বিয়ে করেননি। প্রতিদিন রিকশার মালিককে ভাড়া দিয়ে ৩-৪শ’ টাকা আয় হয়। তাই দিয়েই চলে এখন মা ছেলের সংসার। নিজের বিচিত্রময় জীবন ইতিহাস শেষ করেই শুরু করে দেন আবার নিজের রচয়িতা গান, তোমরা থাকো এই শহরে দালান কোঠা ঘরে, আমরা থাকি কষ্ট করে রোদ বৃষ্টি ঝড়ে। আমাদের এই দুঃখ দেখে তোমরা কেন হাসো। সর্ব শ্রেষ্ঠ মানুষ আল্লাহ দিলো দুনিয়ায়। স্বার্থ লোভে মানুষ কেন হয় যে কত বেঈমান। লেখাপড়া শিখে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো। কলমের কালি দিয়ে তোমরা লাখ লাখ টাকা চুরি করে দালান কোঠা গড়ো, শাদা কাপড় পড়ে যাবা ওই কবরে দালান কোঠা, টাকা পয়সা তোমার সঙ্গে যাবে নাকো —-।

Comments (0)
Add Comment