ভোলাই নাথ পটল

দীর্ঘদিন পর মহাজ্ঞানী সেই নদীর সাথে ফোনে খোশগল্প

দীর্ঘদিন পর মহাজ্ঞানী সেই নদীর সাথে ফোনে খোশগল্প

–ভোলাই নাথ পটল–

ফোন তুলেই নদী বললো, বাব্বা! কতোদিন পর। ভেবেছিলাম বৃন্দাবনে গিয়ে পটলা পটল তুললো নাকি! বললাম, ছি! এতোদিন পর কী সব অলক্ষুণে কথা। কেমন ছিলে, কেমন আছো? নদী বললো, ভাল নেই ভালোবেসে। কেন যে তোমার মত মানুষের মন দিয়েছিলাম?
বললাম কেনো যে বাদুড় হলাম না! বাদুড় হলে এক দুশ কিলোমিটার দূরে থেকেও হাক ডাক শুনতে পেতাম।
ঠিকই বলেছো। মানুষ ২০ হার্য থেকে ২০ কিলো হার্য পর্যন্ত শুনতে পায়। এর কম বেশি কম্পন কানের পর্দায় ধরা পড়ে না। কিন্তু বাদুরের কান বেশিটাও শোনে, কমটাও। কি অদ্ভুত।
বাদুড় নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। বাদুড়ের কারণেই তো বিশ্ব মহামারি। দেখছো না! ধরিত্রীই কতটা অস্থির হয়ে উঠেছে। দ্রব্যমূল্য কোথায় উঠেছে। আর কতটা উঠবে, আর কতজনকে চাকুরিচ্যুত হতে হবে কে জানে!
তোমার তো আবার চাকরি হারানোর ভয় নেই। যার চাল চুলো নেই তার আবার কিসের ভাবনা।
ভাগ্যিস ভবঘুরে। বাজারের থলে ধরতে হলো না।
ধামাধরার দেখছি এতোদিনেও আক্কেল উঠলো না। যাপিত জীবনটাই কি এভাবে কাটাবা? ভেবেছিলাম, তোমাকে নিয়ে রাজনীতিক বানিয়ে দেবো। হলো না। বুদ্ধিজীবী বানাবো তাও তোমার মতো বুদ্ধু দিয়ে হবে না। তো আবার কবে এলাকা ছাড়ছো?
না না। আর এলাকা ছাড়বো না। জানোই তো, কৃষ্ণ বলেছে, যা অতিরিক্ত তাই বিষ। আমার উড়নচন্ডি মার্কা ঘোরাঘুরি অতিরিক্ত’র কাছাকাছি। বিরক্ত এখন সবাই। তুমিও কি আমার ওপর বিরক্ত?
বুঝি না। ইচ্ছেগুলো শিকল বন্দি। স্বপ্নগুলো পাখা ঝাপটায়। মধ্যবৃত্তের নড়বড়ে আত্মবিশ্বাস। ঘরে বাইরে থাকতে হয় তটস্থ। এরপরও কি তোমার ওপর বিরক্ত হতে পারি। তুমি তো আমার নিদানের কা-ারি। তোমাকে ভাবতেই আমার কেটে যায় অবসর। হৃদয় থাকলে ঠিকই বুঝতো।
হৃদয় আছে। তবে বয়সের ভারে দিন দিন হারাচ্ছে স্পন্দনের ছন্দ। কখন না জানি থেমে যায়। তবে তোমার উষ্ণতা পেলে ভিন্ন কথা।
থ্যাটামো রাখো। দেখা হবে কবে বলো। এতোদিন কতটা বদলেছো, দেখতে ইচ্ছে করছে।
দেখা দেখি রাখো। রাজনীতি নিয়ে কিছু বলো। জীবননগর দামুড়হুদা ও আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলো। সদরের পর পরই তো জেলা। উপজেলাগুলোতে যেভাবে নেতৃত্বের আমুল পরিবর্তন হলো, জেলাতেও কি তেমনটা হবে?
চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ভারতে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন রয়েছেন সাথে। সদর উপজেলা কমিটির নেতৃত্বে নতুন মুখের সম্ভবনা বেশি হলেও জেলা নিয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলা মুশকিল।
তোমার কথায় এতো আত্মবিশ্বাসের সের অভাব কেনো? কর্তা কি খুব শাসনে রেখেছে? নাকি আমাকে অন্যভাবে দেখছো।
আরে না। সব ঠিকই আছে। তোমার দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে আমার জ্ঞান চর্চায় মরচে পড়েছে। কতদিন পর এলে। দুদিন সময় দাও। দেখবে কথার খই ফুটছে। কে কি চাচ্ছে তার সবই বলবো। ধৈর্য্য ধরো।
সেই শুরু থেকেই তো সামনে মুলো ঝুলিয়ে রেখেছো। হবে হচ্ছে বলে আর কতদিন?
সবুর বন্ধু সবুর। অতি লোভে তাতি নষ্ট। দেখছো না, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের কীভাবে কপাল পুড়ছে। বিদ্রোহী না হলে দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে যেমন উপজেলা চেয়ারম্যান বাবু ভাইয়ের নাম উঠতো, তেমনই জীবননগরের মর্তুজাকেও ছিটকে পড়তে হতো না।
তা হলে তো সদর ও জেলাতেও গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তির কপাল পুড়বে।
পুড়েছে, নতুন করে আর নাও পুড়তে পারে। তবে জেলা সভাপতির আশু সুস্থতা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কে কে অধিষ্ঠিত হবেন তা অনেকটাই নেত্রীর ওপর নির্ভর করতে হবে। কারণ, সারাদেশে সাংগঠনিক সার্বিক তথ্য চিত্র নেত্রীর নখদর্পণে।
আজ বেশি কথা বলছি না। বয়স হলেও গিন্নির কড়া নজরে আছি।
তুমি আবার স্বাধীন ছিলে কবে? তোমার পরাধীনতা আমাকেও ভীত সন্ত্রস্ত করে। উষ্ণতা ছড়ানোর সাহস হারায়।
তা হলে আমি কি তোমার পথের কাঁটা? উপড়ে নিলেই পারো।
তোমাকে উপড়ে নিলে কি থাকে আমার? সুনিলের নিরা পড়নি? নিরা অসুস্থ থাকলে যেমন পুরো কলকাতাই অসুস্থ হয়ে পড়ে, আমার পটলার অনুপস্থিতি আমাকে অনাহারে রাখে। পটলা কি তা বোঝে?
বোঝে বোঝে। বুঝেও নাবুজ। তা না হলে কবেই শরীরের ভাঁজ খুলে ভেঙে দিতাম দম্ভ। কম্ম সারা। গিন্নির পদ শব্দ, আজ রাাখছি। সুযোগ বুঝে ফোন দেবো।
এই শোন শোন। গতকাল পত্রিকায় দেখলাম তোমার নামের সাথে দে জুড়ে গেছে। ওটা আবার কোথায় পেলে?
আরে ভাই। শুধু কি তাই। নামের সাথে ন্যাশনাল আইডি কার্ড করা অপারেটর ঠাকুর জুড়ে দিয়েছে। এখন ভোলানাথ ঠাকুর বললেও দোষের কিছু নেই। বুঝেছো। এই শোন শোন রাখছি।
ফোন কেটে দিয়ে মনে হলো, নদী মনে হয় আর কোনদিন বদলাবে না। এতো মেধাবী, এতো জানে। সব জানা, বস বুঝা আমরা বুঝে নিয়ে পত্রস্থ করবো।

Comments (0)
Add Comment