চুয়াডাঙ্গার সাহিত্য সংস্কৃতি ও সাংবাদিকাঙ্গনের অন্যতম সংগঠক সৃজনশীল জেড আলমের ইন্তেকাল

সাহিত্য পরিষদ প্রাঙ্গণে বহু সংগঠনের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন : নামাজে জানাজা ও দাফনে অসংখ্য মানুষের অংশগ্রহণ
স্টাফ রিপোর্টার: চমৎকার ছোট গল্প লিখতেন, কবিতা যতোটা না লিখতেন তার চেয়ে বেশি আবৃত্তি করতেন তিনি। গম্বির কণ্ঠে কারুকার্য করে প্রমিত উচ্চারণে আবৃত্তির পাশাপাশি অনুষ্ঠান উপস্থাপনেও ছিলেন দর্শক ¯্রােতা নন্দিত। সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম সংগঠক সাংবাদিকতায়ও রেখেছেন প্রঞ্জার স্বাক্ষর। তিনি জাহাঙ্গীর আলম। জেড আলম বলেই চিনতেন সকলে। বয়স হয়েছিলো ৬৩ বছর। গতপরশু শেষরাতে সকলকে কাঁদিয়ে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহে………রাজেউন)।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের আঙিনায় তার মৃতদেহ কিছুক্ষণের জন্য রাখা হলে বহু সংগঠনের তরফে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়। উপস্থিত সূধিবৃন্দের অনেকেই তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কর্মময় সংগ্রামী জীবন সম্পর্কেও আলোকপাত করেন। বাদ জোহর চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে নামাজে জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। নামাজে জানাজা ও দাফন কাজেও অসংখ্য মানুষ শরিক হন। মৃদুভাষী বিনয়ী জেড আলমের আকস্মিক মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গাজুড়েই নেমে আসে শোকের ছায়া। তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর সাথে চুয়াডাঙ্গার যাদের সরাসারি সাক্ষাৎ হয়েছে তাদের স্মৃতিচারণ নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার আকস্মিক চলে যাওয়ায় সে কাজটিও থমকে গেলো। মৃত্যুকালে তিনি এক মেয়ে স্ত্রীসহ বহুগুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মধুপুর গ্রামের সোলেমান হোসেন। তিনি বহু আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের আরামপাড়ায় বসবাস শুরু করেন। তারই বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। শহরের বিশিষ্ট ডিস ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান পচার বড় ভাই। জাহাঙ্গীর আলম উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও চাকরির দিকে না ঝুকে তিনি লেখা লেখি আর চুয়াডাঙ্গায় সৃজনশীল কাজে যুক্ত হন। যৌবনকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন শুরু করেন তিনি। দিনবদলের কাগজ নামে পাক্ষিক পত্রিকার সম্পাদনা করে তিনি এলাকায় সাড়া জাগান। স্থানীয় পত্রিকার পাঠক সৃষ্টিতে অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, গতপরশু শনিবার রাতে বাড়ি ফেরেন। এসিডিটির কারণে অস্বস্তির কথাও জানান। শুয়ে অস্বস্তির কারণে বাড়ির আঙিনায় পায়চারী করেন। এক পর্যায়ে পড়ে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এলাকার নব নির্বাচিত কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদসহ পরিবারের সদস্যরা দ্রুত উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন। তখন রাত ৩টা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সকালে এ মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তাকে দেখার জন্য অসংখ্য মানুষ তার বাড়িতে ভিড় জমান। দুপুর ১২টার দিকে মৃতদেহ নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ প্রাঙ্গণে। শ্রদ্ধা জানাতে অসংখ্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সদস্যরা হাজির হন। বক্তব্য দিতে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের আহ্বায়ক সাবেক পৌর মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার বলেন, জেড আলম ছিলেন আমার অকৃত্তিম ঘণিষ্ঠ বন্ধু। জীবন সংগ্রামে জেড আলম ছিলেন অনুকরণীয় এক যোদ্ধা। সাহিত্য পরিষদের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সি, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল আমিন, কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি মানিক আকবর, সাহিত্য পরিষদের সাবেক সভাপতি সরদার আলী হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেনসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। কাজল মাহমুদ এসময় সঞ্চালনের দায়িত্বে ছিলেন। বক্তারা জেড আলমের আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমের বিদ্রোহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তার অসমাপ্ত কাজও কীভাবে করা যায় তাও উঠে আসে বক্তাদের বক্তব্যে। আগামী শুক্রবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। সাহিত্য পরিষদ প্রাঙ্গণে যেসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শ্রদ্ধা জানানো হয় তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা লেখক সংঘ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠন, চুয়াডাঙ্গা আবৃত্তি পর্ষদ, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, রিসো, প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা, জেলা পুলিশ, সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন ও সাবেক এমপি শিরীন নঈম পুনম অন্যতম।
প্রসঙ্গত: নব্বই দশকের প্রথম দিকে ঢাকা থেকে প্রকাশিত শামসুজ্জামান দুদু সম্পাদিত সাপ্তাহিক স্বাধীনতা পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক, নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে এলবার্ড বিশ্বাস প্রকাশিত পাক্ষিক দিনবদলের কাগজের সম্পাদক, দৈনিক খাসখবর পত্রিকার সম্পাদক, দৈনিক অন্য আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক আজকের খাসখবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, সাপ্তাহিক খোঁজখবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জেড আলম।

Comments (0)
Add Comment