আগামী তিন বছরের জন্য সরকার কর্মসংস্থান নীতি গ্রহণ

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী তিন বছরের জন্য সরকার যে কর্মসংস্থান নীতি গ্রহণ করেছে, সেখানে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আলোচ্য সময়ে সরকার কর্মসংস্থানের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তার ৩ ভাগের ১ ভাগের কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে বিদেশে। অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী আগামী তিন বছরে প্রায় ৭১ লাখ লোকের নতুন কর্মসংস্থানের টার্গেট গ্রহণ করা হয়েছে; যার মধ্যে দেশে চাকরি হবে ৫১ লাখের, বাকি ২১ লাখ লোককে বিদেশে পাঠানো হবে কাজের জন্য। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার কথা বাজেট ঘোষণায় উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যমেয়াদে যে কর্মসংস্থান নীতি তৈরি করা হয়েছে, সেখানে বৈদেশিক কর্মসংস্থানেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর ফলে শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে তাই নয়, মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে। করোনা মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী যে সংকট তৈরি করেছে, সেই বিবেচনায়- এ মুহূর্তে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর বিষয়টি।

সূত্র জানায়, প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ শ্রমশক্তি বাজারে আসে। তবে করোনা মহামারির কারণে যে বেকারত্ব তৈরি হয়েছে, সেই অংশটিকেও কর্মসংস্থানে যুক্ত করতে হবে। ফলে আগামী তিন বছর কিছুটা বেশি হারে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। বিদেশে প্রচলিত বাজারগুলোর বাইরেও নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানের মাধ্যমে বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগামী তিন বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর নতুন শ্রমশক্তি ২ দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়বে। নতুন এই শ্রমশক্তির প্রায় এক-তৃতীয়াংশকে নানা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করা হবে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতে। এ ক্ষেত্রে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারীকর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। অধিকসংখ্যক মানুষ যাতে বিদেশে কাজের সুযোগ পায়- সে লক্ষ্যে দেশের সব উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, দেশের ভেতর নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে সরকারের সামনে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, স্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠান কারখানা সংস্কার করে আধুনিক মেশিনারিজ ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ালেও নতুন শ্রমশক্তি নিয়োগ করছে না। উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে পণ্যের ‘ভ্যালু এডিশন’ বা মূল্য সংযোজন বাড়লেও নতুন কর্মসংস্থান বাড়ছে না। আবার দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান পুঞ্জীভূত হওয়ায় মানসম্মত উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উপরন্তু আধুনিক ও নতুন কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষ জনশক্তিও পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে সরকার বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে ছয়টি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে অর্থ বিভাগের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সরকার যে পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করেছে সেগুলো হলো- ৮টি বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের নিজস্ব ভবন নির্মাণ; তিন বছরে ২১ লাখ শ্রমিকের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা; বছরে ৫ লাখ হিসাবে তিন বছরে ১৫ লাখ মানুষকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান; প্রত্যাবাসিত প্রবাসী শ্রমিকদের আর্থসামাজিক পুনর্বাসনের জন্য একটি টেকসই পুনর্বাসন নীতি প্রণয়ন; দেশের বাইরে নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান এবং বিদ্যমান বৈদেশিক শ্রমবাজার সম্প্রসারণের জন্য ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট মার্কেট এক্সপ্যানশন রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান এবং রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ করা। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চায়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More