খোশ আমদেদ মাহে রমজান
।। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী।।
পবিত্র মাহে রমজানের ক্ষমার দশকের আজ ২য় দিন। রমজান মাস আমাদের জন্য নিয়ে আসে মাগফেরাত বা পাপ মোচনের অপূর্ব সুযোগ। কবির ভাষায়, ‘সাগর-নদীর কূল-কিনারায় ফেনা ভেসে আসে, রমজানের এই বরকত মাসে পাপ চলে যায় ভেসে’। যে এই মাসে নিজের গোনাহ মাফ করাতে পারলো না আল্লাহর রসুল (সা.) তাকে হতভাগা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশিষ্ট সাহাবি কায়াব বিন উজরা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, একদিন হুজুর (সা.) এরশাদ করলেন, তোমরা মিম্বরের নিকটবর্তী হও। আমরা হাজির হলাম।
অতঃপর হুজুর (সা.) যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা মোবারক রাখলেন বললেন, আমীন। অর্থাৎ আল্লাহ তুমি কবুল করো। আবার যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন। পুনরায় তৃতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। খুৎবা শেষে যখন হুজুর (সা.) মিম্বর হতে অবতরণ করেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম হুজুর! আজ মিম্বরে ওঠার সময় যা কিছু শুনলাম তা’ ইতিমধ্যে কখনও শুনিনি। হুজুর (সা.) এরশাদ করলেন, এই মাত্র হযরত জীবরাঈল (আ.) এসে বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে রমজান পেল অথচ তার গোনাহ মাফ হলো না, আমি বললাম আমীন। অর্থাৎ তাই হোক। দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময় জীবরাঈল (আ.) বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যার সামনে আপনার নাম নেয়া সত্বেও আপনার প্রতি দরূদ পড়লো না। আমি বললাম আমীন। আবার যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম তখন জীবরাঈল (আ.) বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে তার মাতা-পিতা অথবা উভয়ের একজনকে বার্ধক্যে পেল আর সে তাদের খেদমত দ্বারা নিজেকে জান্নাতে পৌঁছুতে পারলো না। আমি বললাম আমীন। অর্থাৎ আল্লাহ তুমি কবুল কর (হাকিম)। এই হাদিসে তিনটি জিনিসের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রমজান মাসে গোনাহ মাফ করানো, নবী করীম (সা.) এর প্রতি দরূদ পেশ এবং মাতা-পিতার খেদমত করা। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জন্য আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমের বিভিন্ন আয়াতে জোর তাকিদ দিয়েছেন (সূরা নিসা: ৩৬, সূরা আনকাবুত: ৮, সূরা বনী ঈসরাইল: ২৩-২৪, সূরা লুকমান: ১৪)। দরুদ শরিফের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ এবং তার ফেরেশতাগণ নবীর ওপর দরুদ পাঠান। হে ঈমানদারগণ, তোমরাও তার প্রতি দরুদ বা সালাম পাঠাও (সূরা আহযাব: ৫৬)। এ ব্যাপারে হুজুর (সা.) এরশাদ করেন, যে আমার প্রতি একবার দরুদ পেশ করবে আল্লাহ তার ওপরে দশটি রহমত প্রেরণ করবেন (মুসলিম)। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে এই মহিমান্বিত মাসে এই তিনটি কাজ বেশি বেশি করি এবং মহান আল্লাহর মাগফেরাত হাসিল করি। (লেখক: মৎস্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)