গর্ভবতী মায়েদের ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডা. রাজিবুল

চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ীতে পিতার স্মরণে ডাক্তার সন্তানের মহতি উদ্যোগ 

বেগমপুর প্রতিনিধি: দেশ জাতি ও মানুষের সেবায় যারা নিজেকে উৎস্বর্গ করেছেন তারই মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকেন অনন্তকাল। কর্মসৃষ্টি বাঁচিয়ে রাখে একজন কৃত্তিমান মানুষকে। কেউ ছোটেন অর্থ বৃত্তের পেছনে আবার কেউ মানব সেবাই নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন। সব পেশায় মানবসেবা করার তেমন সুযোগ থাকে না। তবে ডাক্তারি অনেক বড় মাপের পেশা। সামান্য মাথাব্যথা থেকে শুরু করে যে কোনো অসুখ-বিসুখে মানুষ ডাক্তারের কাছে ছুটে যায়। ডাক্তারের মুখের কথার ওপর ভরসা করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। তাই ডাক্তাররা সমাজের সেবক, মানব সেবক। তাদেরই একজন ডাক্তার রাজিবুল ইসলাম রাজু। নামকাওয়াস্তে ফি নিয়ে গ্রামের মানুষকে নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. রাজিবুল ইসলাম রাজু। এর পাশাপাশি পিতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ি বাজারে অবস্থিত রহিমন নেছা ডায়াগণস্টিক অ্যা- সনো সেন্টার থেকে গর্ভবতী মায়েদের সম্পূর্ণ ফ্রিতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে ১ হাজারেরও বেশি গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন। এ কর্মসূচি চলবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অর্থ বিত্তকে গুরুত্ব না দিয়ে গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় সাধ্যমতো সেবা দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন তিনি। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের কষ্টলাঘবে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে তিনি ছুটে আসেন হিজলগাড়ীতে।

মানুষ সৃষ্টিকর্তার পর যদি কারো ওপর বিশ^াস রাখতে চায় সে হলো ডাক্তার। কারণ প্রতিটি মানুষের নিকট তার নিজের জীবনের চাইতে মূল্যবান আর কিছুই নেই। ডাক্তারি পেশা একটি সেবামূলক ও সম্মানি পেশা হলেও অধিকাংশ ডাক্তারদের আজকাল জনসাধারণ সেই প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয় না নানা কারণে। অনেকেই কর্মের মধ্যে তাদের সে সম্মানটুকু ধরে রাখতে পারেনি। অধিকাংশ ডাক্তার তাদের লোভ লালসায় নিজের আত্মসম্মান বির্সজন দিলেও মানবতার সেবক হিসেবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের পল্লীচিকিৎসক মৃত আব্দুল মজিদ ও পরিবার কল্যাণ সহকারী জিনাত রেহেনার বড় ছেলে ডা. রাজিবুল ইসলাম রাজু। তার কাছে বেগমপুর, নেহালপুর, তিতুদহ, মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। চিকিৎসা নিতে আসা, বারিছন, রমেলা, সাথী, মমতাজ, সুখজান, রমেলা, খাইরন, মিনারা, জুলেখাসহ অনেকেই জানালেন, শহরে গিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে যে চিকিৎসা পায় সেই একই চিকিৎসা হাতের কাছে পাচ্ছি। বর্তমান বাজারে গর্ভবতী মায়েরা হাতের কাছে এভাবে সেবা পাবে ভাবতেই পারছি না। পিতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ডাক্তার রাজু ফ্রি চিকিৎসা দেয়া ছাড়াও ২০১০ সাল থেকে তিনি নামমাত্র ৫০ টাকা ফি নিয়ে চিকিৎসা সেবা চালু রেখেছেন। রেজিস্ট্রার খাতার সিরিয়াল দেখে জানা গেলো এ যাবত তিনি প্রায় ৪০ হাজার গর্ভবতী মায়েদের নামমাত্র ফি নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। যা বিরল। এছাড়াও অনেক গরীব অসহায় মায়েরা টাকা ছাড়াই ফ্রিতে চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছেন। টাকার কারণে কেউ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে এমনটা হতে পারে না বলে জানালেন তিনি। ডা. রাজিবুল ইসলাম ১৯৯৭ সালে হিজলগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯৯ সালে সৈয়দপুর ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যা- কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০০৬ সালে খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন। পরে সরকারি ডাক্তার হয়ে প্রথম ডাক্তারি পেশা শুরু করেন আলমডাঙ্গা হারদী হাসপাতালে। পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার এবং আরএমও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি পদোন্নতি পেয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক ম্যাডেসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। শুক্র ও শনিবার নাড়ির টানে গ্রামের মানুষের সেবা দিতে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে হিজলগাড়ীতে আসেন। ডাক্তার রাজিবুল ইসলাম বলেন, বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিলো আমি লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হব। ডাক্তার হয়ে মা-বাবার মত মানুষের সেবা করবো। পিতা-মাতার সে স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। তাই যতটুকু প্রয়োজন সেটুকু করি। আর বাকি সময়টুকু মানুষের সেবা করে যেতে চাই। গরীব দুখি মানুষের সেবা করার মধ্যে যে আত্মিক শান্তি তা টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। তাই যতোদিন বেঁচে আছি মানুষের সেবা করে যেতে চাই। যতদুরেই থাকি না কেনো গ্রামের মানুষের টানে ছুটে আসি। যতদিন বেঁচে থাকবো পিতা-মাতার ইচ্ছা পূরণে মানব সেবা করে যাবো। স্থানীয়রা বলেন, ডাক্তারী একটি মহান পেশা এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ডাক্তার রাজিবুল আমাদের এলাকার গর্ব। বিত্তবান হবার যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও তিনি অন্যদের থেকে একেবারেই আলাদা। তা না হলে মূল্যবান সময় নষ্ট করে প্রতিসপ্তাহে রংপুর থেকে হিজলগাড়িতে ছুটে আসতেন না। তাই তো রাজিবুল ইসলাম এলাকার মানুষের নিকট মানবতার ডাক্তার।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More