চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী বাজারে সড়কের দু’ধারে সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা

বেগমপুুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী বাজারে এলজিইডির প্রধান সড়কের দু’ধারে সরকারি জমি দখল করে বিভিন্ন পাকা আধাপাকা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ড্রেন নির্মাণের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও জায়গার অভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না ঠিকাদার। আগে ড্রেন নির্মাণের পর রাস্তার কাজ করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। তাই বাজার ও রাস্তার সরকারি জমি মাপযোগ করে ড্রেন নির্মাণের দাবি তুলেছে এলাকাবাসী।
জানাগেছে, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ জিসি-হিজলগাড়ী জিসি সড়কের শূন্য থেকে ১৩ হাজার ৭৭০ মিটার রাস্তা সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজের জন্য গ্রামীণ সংযোগ উন্নতি প্রকল্পর (আরসিআইপি) আওতায় ১৬ কোটি ৪৬ লাখ ৩৩ হাজার ৩০৬ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। যা বাস্তবায়ন করছে চুয়াডাঙ্গা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডি) অধিদফতর। টে-ারে অংশগ্রহণ করে এ কাজের ঠিকাদারী পায় জীবননগর মোল্লা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার জাকাউল্লাহ। তিনি এ কাজ নিজে না করে সাব ঠিকাদারী দিয়ে দেন। সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজটি করেন আব্দুল মোতালেব। সম্প্রতি রাস্তার কাজ শেষ করেছেন তিনি। রাস্তার কাজের সাথে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে হিজলগাড়ী বাজারে ২৪০ মিটারের একটি ড্রেন নির্মাণের বন্দবস্ত আছে সিডিউলে। রাস্তার কাজ শেষ করে ঠিকাদার সিডিউল মোতাবেক ড্রেনের কাজ করতে গিয়ে রাস্তার উত্তর না দক্ষিণ পাশে হবে এ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। জটিলতার কারণে আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছেন তিনি। কাজের ডিজাইনে আছে পাকা রাস্তার সীমানা থেকে ৩ ফুট বাদ দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করতে হবে। যার দৈর্ঘ্য হবে ২৪০ মিটার প্রস্থ ৩ ফুট এবং গভীরতা ৩ ফুট। রাস্তার যে পাশেই ড্রেন করা হোক না কেনো ৭ ফুট জায়গার প্রয়োজন হবে। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, রাস্তা এবং ড্রেনের কাজ করার পূর্বে জমি মাপযোপ করা দরকার ছিলো। সরকারি জায়গায় উন্নয়নের কাজ হবে এতে কারো সমস্যা হবার কথা না।
স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্রে জানাগেছে, হিজলগাড়ী বাজার নেহালপুর, হিজলগাড়ী ও ছোটসলুয়া তিন মৌজায় অবস্থিত। বাজারের বেশিরভাগ জায়গা পড়েছে নেহালপুর মৌজায়। আর রাস্তার জমি হচ্ছে এলজিইডির। হিজলগাড়ী বাজার নেহালপুর মৌজার আর এস ৩৭৬ নং খতিয়ানের ২৭৫৩ দাগে ৬৪ শতক এবং ২৭৫৪ দাগে ১ শতক মোট ৬৫ শতক জমির ওপর অবস্থিত। যা জেলা পরিষদের ক্রয়কৃত সম্পত্তি। এর মধ্যে ৩৩ শতক জায়গা সাপ্তাহিক হাটের জন্য ব্যবহৃত হলেও বাকি ৩২ শতক জমি বিভিন্নভাবে বেদখল হয়ে পাকা আধাপাকা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। বাজারের কয়েজন ব্যবসায়ী বলেন, মাপজোপ করে সরকারি জমির সীমানা নির্ধারণ করে তারপর কাজ করাই ভালো। এতে সাময়িক কষ্ট হলেও স্থায়ী সমাধান হবে। জেলা পরিষদ সূত্রে জানাগেছে, বিষয়টি সামনে চলে আসায় পরিষদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বেগমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন বলেন, যেহেতু ড্রেন করা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে বাজার এবং রাস্তার জায়গা মাপযোগের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাজের প্রধান ঠিকাদার জাকাউল্লাহ বলেন, সিডিউল মোতাবেক কাজ করার নিয়ম। আশা করি সিডিউল মোতাবেকই হবে। ঠিকাদার আব্দুল মোতালেব বলেন, সরকারি টাকায় সরকারি জায়গায় কাজ হবে। সরকার যেদিকে জায়গা দেবে আমি সেদিক দিয়েই করবো। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা প্রকৌশলী আরিফউদ্দৌলা বলেন, সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আগে জমি মাপযোপ হবে তারপর কাজ। বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, ২০১৫ সালে মাপযোপের মাধ্যমে সবকিছু উল্লেখ করেই তো কাজের ডিজাইন করেছে সংশ্লিষ্ট দফতর। জনস্বার্থে টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। সরকারি অর্থে সরকারি জায়গায় ড্রেন হবে এতে কারো সমস্যা হবার কথা না, তবে ড্রেন নির্মাণের পরে রাস্তার কাজ করলে আজ এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না। কোনো কিছু গড়ে তা ভেঙে ফেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবার চাইতে মাপযোপ করেই ড্রেন নির্মাণ কাজটি করার দাবি তুলেছে এলাকাবাসী। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, ২২ সালের রেকর্ড অনুযায়ী সরকার তার সম্পত্তি মাপযোপ করে থাকেন। হিজলগাড়ী বাজার এলাকার জমি মাপযোপের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেদিকেই এগুচ্ছে বলে জানাগেছে। অপরদিকে মাপযোপের ক্ষেত্রে কোনোপ্রকার স্বজনপ্রীতি যেনো না হয় সেদিকটির প্রতি নজর দেবার অনুরোধ জানিয়েছে এলাকাবাসী। জমি মাপযোপের পর সিডিউল মোতাবেক হিজলগাড়ী বাজারের ড্রেন নির্মাণের বিষয়টির প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More