ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে জমির আলু ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে শীতের প্রকোপের সঙ্গে বেড়েছে ঘন কুয়াশা। এতে ক্ষেতে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব ও পাতা পচে আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এই আবহাওয়ায় আলুর তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষেতের নতুন আলু বাজারে উঠবে। এরই মধ্যে আলু ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। এবার জেলাজুড়ে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি আলুর আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ছয় উপজেলায় এবার ১ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৪৪৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হরিণাকু-ুতে ৯০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৮৬ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ১৮০ হেক্টরের মধ্যে আবাদ হয়েছে শতভাগ জমিতে, কালীগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে আলুর আবাদ। এখানে ৯৫ হেক্টরের জায়গায় আবাদ হয়েছে ৯৭ হেক্টর জমিতে। শৈলকুপায় ১১০ হেক্টরের মধ্যে ১০৯ হেক্টর, মহেশপুরে ৮১০ হেক্টরের মধ্যে ৫৫৪ হেক্টর এবং সদর উপজেলায় ৪২০ হেক্টরের মধ্যে আলুর আবাদ হয়েছে শতভাগ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। আলুক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আলু বাজারে নিতে চলছে প্রস্তুতি। জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার শিবনগর লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক সৈকত আলী জানান, রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা পড়ছে। দুপুরের দিকে রোদের দেখা মিলছে। এতে আলুর পচন রোগের আশঙ্কা রয়েছে। একই কথা জানান বলরামনগর গ্রামের আব্দুস সালামসহ বেশ কয়েকজন কৃষক। সাইদুর রহমান নামে দয়ারামপুর গ্রামের এক আলুচাষি বলেন, তিনি দেড় বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে সার, কীটনাশক, বীজ, শ্রমিক, সেচসহ প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আলুর উৎপাদন বিঘাপ্রতি জমিতে ৮০-১০০ মণ হয়। বাজারদরের ওপর নির্ভর করে লাভ- লোকসান। এ ছাড়া এবার কৃষি বিভাগের দেয়া বীজ ভালো হয়নি। বীজ রোপণের এক থেকে দেড় মাসেও তাঁর অধিকাংশ জমিতে চারা বের হয়নি। একদিকে ফলন ভালো না হওয়া, অন্যদিকে ঘন কুয়াশায় নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় উৎপাদন ব্যয় ওঠা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাসীন আলী দাবি করেন, কৃষি দপ্তর থেকে উন্নত জাতের বীজ দেয়া হয়েছে। হয়তো কিছু কৃষক সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারেননি। এ ছাড়া এই আবহাওয়ায় আলুর তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আজগর আলী বলেন, এবার জেলাজুড়ে আলুর আবাদ প্রায় লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে। প্রতিনিয়ত কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কুয়াশায় আলুক্ষেত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কার কথা তিনিও নাকচ করেন।