আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বিএনপি ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল জব্বার বাবলু (ইন্নালিল্লাহি…….রাজেউন)। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গায় জেলা বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এ পদযাত্রা চলাকালীন তিনি অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। দ্রুত উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সরকারি হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি ইতঃপূর্বে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এলাকায় তিনি মিষ্টভাষী ও অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। এক সময় উপজেলার ডাউকী ইউনিয়ন পরিষদের ১৯৯৮-২০০৩ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রয়াত আব্দুল জব্বার আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ার মৃত রইচউদ্দীন মিয়ার বড় ছেলে।
তার মৃত্যুর সংবাদে শোকে ভেঙে পড়েছেন দলীয় নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা। ডুকরে ডুকরে কাঁদেন অনেকে। শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়ে সকলে। বেদনাবিধূর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বেদনাদীর্ণ বুকে লাশ ঘিরে ওঠে শোকের মাতম। এ সংবাদ শোনার পর আলমডাঙ্গা ও আশপাশের দলীয় নেতাকর্মী ও স্বজনরা আনন্দধামস্থ বাড়িতে ছুটে যান। সে সময় বাড়িতে শোকবিহ্বল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্বজনদের বুকফাটা আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে তিনি প্রথমে ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে যোগ দেন। অল্প কিছুদিন পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। ৮০ দশকে ফিরে আসেন সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে। ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা ও মুখের সুমধুর কথাবার্তায় অল্পদিনেই তিনি জাতীয়তাবাদী দলে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে নেন। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি শহিদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তম-এর নীতি ও আদর্শ এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনে গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন। তাছাড়া, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে তিনি মাঠপর্যায়ে যে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন তা এলাকার নেতা-কর্মীদের নিকট অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
প্রয়াত আব্দুল জব্বার ছিলেন আলমডাঙ্গার রাজনৈতিক অঙ্গনের নক্ষত্র। তার বলিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মকা-ে অনুপ্রাণিত হয়েছে এতদাঞ্চলের জাতীয়তাবাদী শক্তির তরুণ প্রজন্ম। আমৃত্যু রাজনীতিতে সক্রীয় ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। অত্যন্ত সামাজিক ব্যক্তি ছিলেন। মানুষের সেবায় উৎসর্গ করেছেন জীবনের অধিকাংশ সময়। শিক্ষিত ও জনদরদী এই রাজনীতিবিদের দূরদর্শিতা, হৃদ্যতাপূর্ণ, স্নিগ্ধ ও মধুর কথাবার্তা, সর্বোপরি বিস্ময়কর সাংগঠনিক দক্ষতা তাকে রাজনীতিতে অনন্য করে তুলেছিল।
মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন ছোট ভাই অধ্যাপক কবি আসিফ জাহান।
এদিকে মো. আব্দুল জব্বার বাবলুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান খান বাবু ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফ। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এক শোকবার্তায় বাবু খান ও শরীফ বলেন, মো. আব্দুল জব্বার বাবলু ছিলেন আমৃত্যু সংগ্রামী। দলের জন্য এমন নিবেদিত অন্তঃপ্রাণ মানুষ খুব কমই দেখা যায়। আমরা গভীর শোকের আচ্ছন্ন। জাতীয়তাবাদী পরিবার কখনও তাকে ভুলবে না, দল সারাজীবন মনে রাখবে। আমরা মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
অপরদিকে, আব্দুল জব্বার বাবলুর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদল। এক শোকবার্তায় যুবদল সভাপতি শরিফ উর জামান সিজার গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। এছাড়াও আব্দুল জব্বার বাবলুর মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদল গভীর শোক প্রকাশ করেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. শাহাজান খান ও সাধারণ সম্পাদক মোমিন মালিতা এক শোকবার্তায় বলেন, মো. আব্দুল জব্বার বাবলু ছিলেন আমাদের অনুপ্রেরণা। ছাত্রদলকে তিনি নিজের পরিবারের মতোই দেখতেন। জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং সেই সাথে শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
এছাড়াও মরহুমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন সাবেক পৌর মেয়র বিএনপি নেতা মীর মহি উদ্দীন, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির একাংশের উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল কাউনাইন টিলু ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। তারা বিবৃতিতে বলেন, দোয়া করি মহান রাব্বুল আলামিন যেন তাকে বেহেশত নসিব এবং শোকার্ত পরিবারবর্গকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দান করেন।