সরকার ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার পাঠ্যবই মুদ্রণের উদ্যোগ নিয়েছে। সাধারণত বই মুদ্রণে যাওয়ার আগে বাজারদর দেখে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রথমে প্রাক্কলন (সম্ভাব্য দর) ঠিক করে থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটি এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বইয়ের প্রতি ফর্মার যে দর নির্ধারণ করেছিলো, কাজ পাওয়ার জন্য নজিরবিহীন প্রতিযোগিতায় নেমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর চেয়ে অবিশ্বাস্য কম দরে অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ কমে দরপত্র দাখিল করে। ইতোমধ্যে এ খাতে ডলারের বিপরীতে টাকার অবনমন, বিদ্যুৎ ঘাটতি ও জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্যের প্রভাব পড়ায় উল্লিখিত দরে পাঠ্যবই মুদ্রণ নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করবে না বলে জানিয়েও দিয়েছে। এ অবস্থায় দর সমন্বয় না করলে এবার যথাসময়ে পাঠ্যবই মুদ্রণ এবং আগামী বছর তা যথাসময়ে বিতরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়।
সাধারণত পাঠ্যবই নিয়ে বছরের শেষদিকে সংকট দেখা দেয়। অথচ এবার প্রস্তুতি পর্বেই অনাকাক্সিক্ষত জটিলতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নতুন বছরের বই মুদ্রণ নিয়ে অনিশ্চয়তা ও জটিলতা থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে, তা ভেবে দেখা জরুরি। কাগজসহ মুদ্রণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দর সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ না করে শুরুতেই সমঝোতায় পৌঁছুনোর চেষ্টা করা উচিত বলে মন করি আমরা। নতুন বই হাতে নতুন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অভিষেক ঘটবে, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু প্রতিবছরই এ নিয়ে নানারকম জটিলতা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এবার যেন তা না ঘটে, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সময়মতো বই না পেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো বই তুলে দেয়ার দায়িত্ব যেহেতু এনসিটিবির ওপর ন্যস্ত, তাই এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এ কথা সত্য, প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে মুদ্রাকররা সরকারি প্রাক্কলিত দরের চেয়েও কম দর দিয়েছেন। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে তাদের দেয়া দর পুনর্বিবেচনা করা। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি বর্তমান বাস্তবতা আমলে নিলে এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়ার লক্ষ্যে এ বিষয়ে এনসিটিবি’র দায়িত্বশীল ভূমিকা কাম্য।