বিনা চিকিৎসায় খেয়ে-না খেয়ে গুনছেন মৃত্যুর প্রহর
এক সময়ের তুখোর যুবলীগ নেতা ৩ বারের পৌর কাউন্সিলর কাজলের করুণ দশা
দর্শনা অফিস: দর্শনা পৌর যুবলীগের এক সময়ের তুখোর নেতা স্বপন আহমেদ কাজল। যুবলীগ নেতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন দর্শনা পৌরসভার পরপর তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর, দুইবারের প্যানেল মেয়র ও ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বও পালন করেছেন দীর্ঘসময়। সেই সাথে তিনি ছিলেন দর্শনা রেলবাজারের বিশিষ্ট কাপড় ব্যাবসায়ী। সকলের প্রিয় মিষ্টভাষী সেই মানুষটি আজ বড়ই অসহায়। টাকার অভাবে চিকিৎসা হতে পারছে না যেমন, তেমনি ওষুধ কিনে খাওয়ারও সাধ্য নেই। পরিবার-পরিজন দিয়ে দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। চরম কষ্টে মৃত্যুর প্রহর গুনছে প্রতি মূহুর্তে। সেই তুখোর যুবলীগ নেতার খোঁজ রাখে না কেউ। দর্শনা পৌর শহরের আজমপুরের আ. লতিফের ছেলে স্বপন আহমেদ কাজলের রাজনীতি শুরুটা ছিলো ১৯৯৫ সালের দিকে। প্রয়াত বর্ষিয়ান আ.লীগ নেতা, তৎকালীন দর্শনা ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কয়েকবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম, প্রয়াত আ.লীগ নেতা মজিবর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম ও দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মঞ্জুর হাত ধরেই রাজনীতির হাতে খড়ি কাজলের। রাজনৈতিক দুরদর্শিতা, দক্ষতা ও সাহসিকতায় অল্পদিনেই যুবলীগ অঙ্গনে কাজল ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন। আ.লীগের দুঃসময়ে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন দর্শনা পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। পরে দর্শনা পৌর আ.লীগের যুগ্ম-সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন নিষ্ঠার সাথে। কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন কাজল। পাশপাশি দর্শনা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ২য় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। পরে তিনি আরো ২ বার পরপর কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে টানা তিনবারের কাউন্সিলর পদে থাকাকালীন শেষের ২ বার প্যানেল মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন সততার সাথে। এছাড়া প্রায় ৯ মাস ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন কাজল। দর্শনা রেলবাজারের বড় কাপড়ের দোকান কাজল গার্মেন্টেসর মালিকও ছিলেন তিনি। রাজনীতি, সমাজসেবা ও প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে শুধু গার্মেন্টসই নয় হারিয়েছেন সহায়-সম্পদ। এখন নিঃস্ব কাজল সেই আগের অবস্থায় নেই। বছর চারেক আগে তিনি পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হন। সেই থেকেই পঙ্গুত্ব জীবন-যাপন করছেন। বছর দুয়েক থেকে যেমন লোপ পেয়েছে স্মৃতিশক্তি, তেমনি হারিয়েছেন বাকশক্তি। কাজলের পরিবারে স্ত্রী, ১ ছেলে ও ২ মেয়ে। বছর কয়েক আগে দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান তাকে দেখতে এসে যেমন করেন আর্থিক সহায়তা, তেমনি তার ছেলে শুভকে পৌরসভায় চাকরির ব্যবস্থাও করেছিলেন। একটা সময় পৌরসভার চাকরি ছাড়তে হয় শুভকে। ফলে উপার্জনের পথ হয় বন্ধ। সেই সাথে বন্ধ হয় কাজলের চিকিৎসা। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয় পরিবারের সবাইকে। সংসার যেখানে চলে না, সেখানে ওষুধের টাকাই বা পাবে কোথায় এমনটি জানালেন স্ত্রী মিনারা আক্তার মিনু। অশ্রুসজল চোখে ইশরায় ও আধো আধো ভাবে বহুকথায় বলতে চেয়েছিলেন কাজল। নির্বাক এ মানুষটির চোখে তখন ঝরতে দেখা গেছে পানি। জীবনের শেষ সময়টা চিকিৎসা, ওষুধ ও দুবেলা আধপেটা খেয়েও বাঁচার আকুতি কাজলের। জীবন নদীর তীরে দাঁড়িয়েও আশায় বুক বেধে আছে দল ও বা সমাজের বৃত্তবান মানুষ দাঁড়াবে তার পাশে।